বাংলা৭১নিউজ,ফেনী প্রতিনিধি: ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটকের পরদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই কাউন্সিলরের হাতাহাতির ঘটনায় ‘রহস্য’ সৃষ্টি হয়ছে। এ ঘটনার রেশ ধরে গত ৬ এপ্রিল ভুক্তভোগী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার ছাদে নিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার পর তাদের ওই ঘটনা ফের সামনে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষকে আটকের পরদিন ২৮ মার্চ সকালে সোনাগাজীতে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ম্যনেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় পৌর কাউন্সিল মুকছুদ আলম মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করেন। একই সময়ে উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে আরেক কাউন্সিলর ও মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে মুকছুদ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ আবদুল হালিম মামুনের দিকে তেড়ে আসেন। এ নিয়ে দুই কাউন্সিলরের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য ও অভিভাবকরা জানান, ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে থাকা বিদ্যুৎসাহী সদস্য কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুনকে কৌশলে বাদ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে একই পদে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটিতে সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি ওই কমিটির সহ-সভাপতি হন। তিনি তার হাতকে শক্তিশালী করতে ওই মাদরাসায় কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও আরেক কাউন্সিলর মুকছুদ আলমকে অভিভাবক সদস্য করেন। এনিয়ে দুই কাউন্সিলনের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়। এ ঘটনার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দায়ী করছেন অনেকে।
গতকাল সোমবার অগ্নিদগ্ধ ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় অজ্ঞাত চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দয়ের করেছেন। মামলার এজহারে মুখোশপরা ওই চারজন ছাড়াও অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেয়া নুর উদ্দিন, জাবেদ, শাহাদাত হোসেন শামিম ও মহিউদ্দিন শাকিলসহ আরও বেশ কয়েকজন ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে তার স্বজনদের মামলা তুলে নিতে এরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন মাহমুদুল হাসান নোমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবদুল হালিম মামুন জানান, আমার ও মুকছুদ আলমের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ওই দিন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর পক্ষে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করলে আমি তাদের সহযোগিতা করি। শিক্ষার্থীদের আমি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে জোর এনেছি ভেবে বড় ভাই মুকছুদ আলম আমার ওপর ক্ষেপে যান। পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়।
এ বিষয়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন জানান, কমিটি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। রাফির অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় তিনি মর্মাহত। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত শনিবার (৬ এপ্রিল ) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এস.এম