বাংলা৭১নিউজ, নুরুল আলম বাকু, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : রাস্তার অপ্রশস্ততা, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, বাস/ট্রাক টার্মিনাল না থাকা, বেপরোয়া গতিতে অবৈধযানের অবাধ চলাচলসহ নানা অনিয়মে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার শিল্পনগরীখ্যাত দর্শনা শহরের মাঝ বরাবর অবস্থিত দর্শনা-মুজিবনগর সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কটির মিলস্গেট থেকে পুরাতন বাজার রেলগেট পর্যন্ত রাস্তা অলিখিত বাস/ট্রাক টার্মিনালে পরিনত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। পরিত্রান চায় এলাকার মানুষ।
বর্তমানে দর্শনা বাসষ্ট্যান্ড, কেরুজ মিলগেট, আখের গাড়ীর গেট, হীরা সিনেমা হলের সামনে, রেলবাজার বটতলা ও ব্যাঙ্কের সামনে, অংকুর কেজি স্কুল ও কাঁচাবাজারের সামনে, পুরাতন বাজার রেলগেট, পুরাতন বাজার ভিআইপি মোড়, হাটের মোড় এবং রামনগর মোড়ে রাস্তার ধার ঘেঁসে দোকানপাট থাকায় সেইসাথে মানুষজন ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তায় চলাচল করা ও পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ৪/৫ বছরে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৮জন মানুষ। এর মধ্যে, ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর রেলবাজার ব্যাংকের সামনে মটরসাইকেল ও পাওয়ারট্রলির ধাক্কায় এক স্কুলছাত্র(১৪)’র মৃত্যু হয়। এর ঠিক এক বছরের মাথায় একই কায়দায় ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়কের জে আর পরিহনের কাউন্টারের সামনে আখবোঝাই ট্রাক্টর ও মটরসাইকেলের সংঘর্ষে তালহা (৩২) নামের এক যুবক ও সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ কেরুজ মিলগেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় পাখিভ্যান ও ইজিবাইকের ধাক্কায় হাজেরা বেগম(৫৭) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।
অর্থ বরাদ্দের অভাবে দুই বছর আগে জেলা পরিষদের উদ্যোগে শুরু হওয়া বাস/ট্রাক টার্মিনালটির নির্মানকাজ শেষ না হওয়ায় শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সড়কের পুরো অংশ জুড়েই এখন অলিখিত বাস/ট্রাক টার্মিনালে পরিনত হয়েছে। এ সড়কটির ধারে অবস্থিত ১৫-১৬ টি পরিবহন সংস্থার কাউন্টার থেকে ২৪ ঘন্টায় দর্শনা হতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, বরগুনাগামী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে। রাস্তার পাশে কোন জায়গা না থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা এসব বাস রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে ও ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা পণ্যবাহী ট্রাক মেইন রোডের উপর ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মালামাল খালাস করে থাকে।
এ সড়কটি দিয়েই দর্শনা রেলবন্দরের ভারত হতে আমদানীকৃত পণ্য লোড করে শত শত ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এছাড়া রাতদিন অসংখ্য ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, নসিমন, করিমন, আলমসাধূ, লাটাহাম্বার, মটর সাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, রিক্সা যাতায়াত করে। প্রতিদিন দর্শনা পাইকারী কাঁচাবাজার থেকে শাকসবজি এবং সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী ডুগডুগি ও শিয়ালমারি হাটের গরু বোঝাই শত শত ট্রাক, পাওয়ারট্রলি ও লাটাহাম্বার চলাচল করে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫মাস খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দক্ষিনাঞ্চলের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা দিয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করার জন্য মুজিবনগর যাতায়াত করে। বর্তমানে কেরু চিনিকলের আখমাড়াই মৌসুম শুরু হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে আখবোঝাই শত শত গাড়ী। ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যানবাহন ও পথচারীসহ রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষণ রয়েছে আতঙ্কে।
এ রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রী-চালকসহ হাজার হাজার পথচারী দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হলেও সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ সড়কে চলাচলকারী যানের মধ্যে অবৈধযানের সংখ্যাই বেশি। সম্প্রতি এর সাথে যোগ হয়েছে মটরচালিত দ্রুতগতির শত শত রিকশাভ্যান। এসবের বেশিরভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে অবাধে রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটিয়ে চললেও প্রশাসন এ ব্যপারে রয়েছে নীরব ভুমিকায়।
রাস্তার উপর যাত্রিবাহী বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা ও নামানোর বিষয়ে পরিবহন কাউন্টার মাষ্টার কওছার আলি শাহ্, লাভলু ও দোলন বলেন, শহরে পরিহনের জন্য নির্দিষ্ট কোন টার্মিনাল না থাকায় বাধ্য হয়েই আমরা রাস্তার উপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো করে থাকি। টার্মিনাল নির্মান হলে আমরা সেখানে চলে যাব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাস্তাটির কারনে জনসাধারনের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, শহরের এ রাস্তায় যানবাহন ও মানুষজনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই রাস্তাটির প্রশস্ততা বৃদ্ধি ও ড্রেন নির্মানসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় প্রেরন করেছি। এগুলো পাশ হয়ে আসলেই কাজ শুরু করবো। জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বর সিরাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে জানান, অর্থ বরাদ্দের অভাবে বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মানের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ টার্মিনালটি নির্মিত হলে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস