সীমাহীন অযত্ন-অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাণ নরসুন্দা নদী এখন ময়লার ভাগাড়। এক শ্রেণির অপরিনামদর্শী লোকজনের দখল, ভরাট ও দূষণের মহোৎসবে নদীটি এখন বিপন্ন। যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীটি।

দ্রুত পূনঃখনন কাজের পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে নদীটি বাঁচাতে না পারলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহল। তবে এমন অবর্ণনীয় দশা কাটিয়ে স্বপ্নের পরিবেশ বাস্তবায়নে আশার বাণী শুনিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদ ব্রহ্মপুত্র থেকে নরসুন্দা নদীর উৎপত্তি। নদীটি হোসেনপুর থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের মাঝপথ দিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে ৯৭ কিলোমিটার পথ বহমান থেকে করিমগঞ্জে ধনু নদীতে গিয়ে পড়েছে। এ নদীটির তীরেই এক সময় গড়ে ওঠে প্রাচীন ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ কিশোরগঞ্জের নগর সভ্যতা।

স্বাধীনতা উত্তর আশির দশক পর্যন্ত কিশোরগঞ্জবাসীর জীবনে অসামান্য অবদান রেখে আসছিল এই নরসুন্দা নদী। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হয়ে দখল-দূষণ-ভরাটে বিপন্ন হতে থাকে নদীটি।

পরিবেশবাদী লোকজনের দাবি ও আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১২ সালে ১০৬ কোটি টাকায় নরসুন্দা নদী খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। নাম দেওয়া হয় ‘নরসুন্দা লেকসিটি’। নদী দখলবাজদের চিহ্নিত করে অভিযানও শুরু হয়।

তবে সেই উদ্যোগও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই থমকে দাঁড়ায়। সেই প্রকল্পের মাধ্যমেও নরসুন্দাকে হত্যা করা হয়েছে লেকসিটি নামে। নদী কীভাবে লেকসিটি হয় এমনটিই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল জানান, আশির দশকের শুরুতে কাওনায় অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নরসুন্দা নদীর প্রাণ প্রবাহ বন্ধ করে নদীটিকে হত্যা করা হয়েছিল।

শুকনো মৌসুমে এখন নরসুন্দায় পানি নেই, ভরা মৌসুমে নেই প্রবাহ। নোংরা-ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে এখন কিশোরগঞ্জবাসীর অভিশাপ হয়ে উঠেছে নদীটি। একে রক্ষা করার পথ একটাই, উৎসমুখে কাওনার বাঁধ খুলে দেওয়া এবং ব্রহ্মপুত্র থেকে একটি খাল এনে নরসুন্দার উৎসমুখে সংযোগ করে দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, সিএস মূলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে, সঠিক পিলার স্থাপন করতে হবে। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ নরসুন্দা খনন করতে হবে। ইতোপূর্বে নরসুন্দার খনন কাজের সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এখনো যারা ময়লা আবর্জনা ফেলে নরসুন্দাকে দূষণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই প্রাণ ফিরবে নরসুন্দায়।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নরসুন্দা নিয়ে পরিকল্পনা ও সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে খুব শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাবনা দাখিল করা হবে। আর ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নরসুন্দা নদীতে পানি প্রবাহ ফিরে আসবে।

বাংলা৭১নিউজ/এআরকে