♦অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান- পাউবো ডিজি
♦সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য নেয়া হচ্ছে নতুন প্রকল্প- প্রধান প্রকৌশলী
পদ্মা পাড়ের সুন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের কাছে টি আকৃতিক বাঁধটি (টি-গ্রোয়েন) হচ্ছে এই পদ্মার পারে বিনোদনের মূল আকর্ষন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজশাহী শহরকে রক্ষার জন্য এই বাঁধটি নির্মাণ করে। এই বাঁধের ডানে ও বামে অর্থাৎ বড়কুঠি থেকে বুলনপুর ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাউবো বাঁধ নির্মাণ করেছে। এ কারণে একদিকে রাজশাহী শহর যেমন ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে, তেমনি পদ্মার বুক থেকে অনেক জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এসব জমিকে ঘিরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ম্বপ্ন দেখছে শহর সম্প্রসারণের।
স্থানীয় পাউবোর দেওয়া গোটা বাঁধ এলাকাটিই দর্শনার্থীদের কাছে অনেক আকর্ষনীয় হলেও এর এখানকার নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। এছাড়াও বাঁধের জায়গা দখল করে বাসাবাড়ী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এখানে নেই কোন বিশ্রামাগার, ভাল কোন রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটকদের জন্য কোন ওয়াস রুম। এতে করে পর্যটকদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। অন্যদিকে, টি-গ্রোয়েনসহ গোটা বাঁধ এলাকাটি রয়েছে ঝুঁকির মুখে।
পদ্মা পাড়ের সুন্দর্য উপভোগ করতে শুধু স্থানীয়রাই নয়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা মানুষগুলোও এখানে আসেন বিনোদনের জন্য। ফলে এই এলাকায় বছরজুড়েই থাকে বিনোদনপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি। এখানে বিশাল নীলাকাশের নিচে সূর্যের সোনালী কিরণ মাখা পদ্মার ওপারের বেলে ভূমি, সবুজ প্রকৃতি দেখা ও পদ্মার হিমেল বাতাস গায়ে মেখে বিনোদনপ্রেমীরা সারা দিনের অবসাদ দুর করেন। ভাড়া নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা কিম্বা স্পীড বোটে চড়ে পদ্মার ওপারে ঘুরাঘুরি করেন।
পদ্মার পাড়ে টি গ্রোয়েনটিতে উঠার পূর্বেই অর্থাৎ বাঁধের নিচেই রয়েছে- জেলা প্রশাসক, জেলা মেজিষ্ট্রেট, পুলিশের ডিআইজি, এসপিসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসভবণ। এগুলো যেমন নান্দনিক, ঠিক তার উল্টো চিত্রটি হচ্ছে বাঁধের অপর প্রান্তের। স্থানীয় কিছু অসাধু মানুষ পদ্মার পাড়ের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিয়েছে। এর সাথে জড়িত আছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী। সেইসাথে পদ্মার পাড়ের বিভিন্ন স্থানে নদীসংলগ্ন শহররক্ষা বাঁধের ওপর এবং দুই পাশে চলছে গরু, ছাগল এবং ভেড়া পালন। মেলে দেওয়া হচ্ছে কাপড় আর বিভিন্ন প্রবেশমুখে ময়লা ও আবর্জনার স্তুুপ। পদ্মা পাড়ের অধিকাংশ এলাকা জুড়েই উৎকট দূর্গন্ধ। জায়গা দখল আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পদ্মার পাড়ে বিনোদনের জন্য বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বিনোদন থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন।
পদ্মার পাড়ের পাঠানপাড়ার লালনশাহ মুক্তমঞ্চ চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানগুলোতে সম্প্রতি স্থানীয় বখাটে ও মাদকসেবীদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সম্প্রতি কয়েকজন নারী উন্নয়নকর্মী মুক্তমঞ্চ এলাকাতে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকারও হয়েছেন। এমন অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও রয়েছে।
এছাড়াও টি গ্রোয়েনের আশেপাশে ঘাট না থাকায় যেভাবে ভাড়া নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা কিম্বা স্পীড বোট নোঙ্গর করছে- এতে করে গ্রোয়েন ও বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আর পুরো পদ্মার পাড়জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বাদামওয়ালা, চা-কফির দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণেও নষ্ট হচ্ছে পদ্মার পাড়ের সৌন্দর্য। এসব ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্যে ভ্রমণপিপাসুরা অসহায়। তাঁরা পাড় দখলে নিয়েছেন চেয়ার পেতে। পদ্মার পাড় ঘিরে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এসব ব্যবসায়ীর উৎপাতে।
এখানে নিরিবিলি বসে থাকা তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়ার মতো রাস্তাও নেই। যদি কেউ যেতে চান, তাহলে যেতে হবে চেয়ার ডিঙিয়ে। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ এসব চেয়ারে বসেন। কিন্তু এসব চেয়ারে বসলেই দিতে হয় টাকা। জনপ্রতি ২০-৫০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে চেয়ারে বসার জন্য। শুধু তা–ই নয়; ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে চেয়ারে বসা মানুষদের। টাকা দিতে ও পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। অনেক সময় শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব কারণে পর্যটকদের ভোগান্তি বাড়ছে। সব মিলিয়ে পর্যটন স্থান পদ্মার পাড় হারাচ্ছে স্বাভাবিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য্য।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মল্লিক সাঈদ মাহবুব বলেছেন, পদ্মার পাড়ের সুন্দর্য়্য বৃদ্ধি, অবকাশ কেন্দ্র নির্মাণ, পাউবোর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, বাঁধের উপর দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চরানো বন্ধ এবং পদ্মার পাড়ে পর্যটক–দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণ নারীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এজন্য আমরা একটি প্রস্তাবনাও নিয়েছি এবং সে মোতাবেক ডিপিপি প্রনয়ন করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এস, এম, শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা টি গ্রোয়েনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরণের নির্দেশনা দিয়েছি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। প্রস্তাবনা পেলে আমরা সবদিক বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থা নেব।
পাউবো রাজশাহী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, টি গ্রোয়েন এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি এবং বিনোদনপ্রেমীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
রাজশাহীর সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেন, পদ্মার পাড়ে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন করতে হবে। পদ্মার পাড়জুড়ে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলও বৃদ্ধি করতে হবে। অবৈধ দখর উচ্ছেদ করতে হবে। পদ্মার পাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়াও পদ্মার পাড়ে বিগত সময়ে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার যেগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো সংস্কার এবং অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ