রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
আন্দোলনে আহতদের দেখতে শেখ হাসিনা বার্নে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পাকিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে ৬ সেনা ও ৮ বিদ্রোহী নিহত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই বন্ধুর মৃত্যু নেত্রকোণায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৯২৭ বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যগামীদের জন্য হচ্ছে ‘স্পেশাল লাউঞ্জ’ ‘হেলমেট বাহিনীর’ সদস্য মনিরুল অস্ত্রসহ গ্রেফতার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেফতার ‘সাধারণ মানুষ যাতে ইলিশ খেতে পারে, সেই চেষ্টা করতে হবে’ শেরপুরে বন্যায় ৪ মৃত্যু, নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাওয়ার আহ্বান সেনাপ্রধানের সারা দেশে দুই লক্ষাধিক আনসার মোতায়েন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত পলাতকদের তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পর এবার সংবিধান বাতিলের দাবি হাসনাতের সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব করেছে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি এক সপ্তাহে তেলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ ঘরেই মাদকের কারবার করতেন স্বামী-স্ত্রী, যৌথবাহিনী অভিযানে ধরা

দক্ষিণ উপকূলে ঝড়ের চেয়ে ভয় বেশি জলোচ্ছ্বাসে

বরিশাল প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

২০১৯ সালের বুলবুল, ২০২০ সালের আম্পান, ২০২১ সালের ফণী—একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ উপকূলে । বছর বছর ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা। ফলে সময়ের সঙ্গে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বেড়েছে, কমেছে প্রাণহানি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে দুর্যোগের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।

গত এক দশকে জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস নয়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় অধিক উচ্চতার জোয়ারে বাঁধ প্লাবিত হচ্ছে। তাতেও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক।  

বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ পরিণত হয়েছে। আজ অমাবস্যা। এ সময়ে সমুদ্রে জোয়ারের পানির উচ্চতা এমনিতেই বেশি থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও ঝোড়ো বাতাস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, উপকূলীয় জেলাগুলো উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় সিডরে শুরু

দেশ স্বাধীনের আগে উপকূলে বাঁধ ছিল না। ফলে ’৬০-এর দশকের বন্যায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। পরবর্তীতে ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসেবে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। বেসরকারি হিসেবে মৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ লাখের বেশি। ওই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পদের ক্ষতিও ছিল ব্যাপক।  

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের এই প্রবণতার শুরু। এরপর থেকে যত ঝড় আঘাত হেনেছে, প্রতিটিতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েই চলেছে। শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোতে গড়ে আট থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয় লোকালয়। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে।

’৭০-এর ঝড়ে ব্যাপক প্রাণ ও সম্পদহানি হলেও জোয়ারের উচ্চতা ছিল সিডরের চেয়ে অন্তত দুই ফুট কম। তখন বাঁধ ছিল না বলে প্রাণহানি বেশি হয়। এরপর ’৬০ ও ’৭০-এর দশকে উপকূলীয় এলাকা বাঁধ দিয়ে ঘিরে ফেলার পর জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানি কমে যায়। তবে সিডরের পর সেই পুরনো দুর্যোগ নতুন রূপে দেখা দিয়েছে।  

kalerkantho

ঝড়ের চেয়ে বেশি ক্ষতি জলোচ্ছ্বাসে

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে জোয়ারের উচ্চতার ভয়াবহতার শুরু। সিডরের সময় জোয়ারের উচ্চতা ছিল প্রায় সাড়ে ১২ ফুট। সরকারি হিসেবে এ ঝড়ে প্রাণ হারান ৩ হাজার ৩৪৭ জন। আর বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের ওপর। জোয়ারের তাণ্ডবে সাত লাখ ৪২ হাজার ৮৮০ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ১৭ লাখ ৩০ হাজার একর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়। ঝড়ে ভেসে যায় কয়েক লাখ গবাদি পশু।

২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় দক্ষিণ উপকূলের জেলাগুলোতে প্রায় নয় দশমিক ৩৪ ফুট উচ্চতার জোয়ার হয়। আইলায় প্রাণহানি হয় অন্তত ১৯৩ জনের। প্রাণহানি ছাড়াও উঁচু জোয়ারে দীর্ঘমেয়াদে যে ক্ষতি হয়, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আইলায় ৯৭ হাজার একরের আমনখেত লোনাপানিতে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। কাজ হারান ৭৩ হাজার কৃষক ও কৃষি-মজুর।  

২০১৩ সালের ১৬ মের ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ জোয়ারের উচ্চতা ছিল সাড়ে নয় ফুট। এতে ১৭ জন মারা যান। এরপর ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এ নয়জন মারা যান। জোয়ার ও প্রবল বর্ষণে উপকূলে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আঘাত হানলে ২১ জন মারা যান। ক্ষয়ক্ষতি ৪০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়।  

তারপরের বছর ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানে। ঝড়ে প্রাণহানি না ঘটলেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতে মারা যান নয়জন। প্রাণহানি কম হলেও ১০-১২ ফুটের জোয়ারে ঘরবাড়ি, বাঁধ, সড়ক ও কৃষিতে ৫৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।  

‘ফণী’র পর একই বছরের ৯ নভেম্বর প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানে। তখন জোয়ারের উচ্চতা ছিল নয় থেকে ১২ ফুট। ঝড়ে মারা যান ২৪ জন। ২৬৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়।  

কিন্তু আম্পান ও ইয়াসে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ১৪ ফুটের বেশি। জোয়ারের পানিতে ভাসে লাখো পরিবার। ঘরে বুক পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবন। ঘের-পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল ভেসে যায়। জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা যায় ছয় শিশু।

kalerkantho

জোয়ারের চেয়ে বাঁধ নিচু

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস রুখে দিতে পারবে এমন চিন্তা করেই ’৬০ ও ’৭০-এর দশকে বাঁধ তৈরি করা হয়। নদীর পাড়ে বাঁধের উচ্চতা ১০ থেকে ১৩ ফুট এবং অভ্যন্তরে ৮ ফুট। কিন্তু এখন ১০-১২ ফুট উচ্চতার জোয়ারও রুখতে পারছে না এই বাঁধ।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে নয় থেকে ১৩ ফুট উচ্চতার জোয়ার হয়। এতে বরিশাল অঞ্চলের ৭৬৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হন। সরকারি হিসেবে আম্পানে জলোচ্ছ্বাসে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।  

সেই রেশ কাটতে না কাটতেই জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত নিম্নচাপের প্রভাবে পুনরায় ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জোয়ারে ভাসে উপকূল। এতে বিভাগের সব কটি জেলার অধিকাংশ সড়ক, বাড়ি ও এলাকা প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদ-নদীগুলোতে অধিক উচ্চতার জোয়ার হয়। আট থেকে ১৪ ফুট উচ্চতার জোয়ারে ভাসে মানুষের বসতি, ফসলের ক্ষেত।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com