বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: তুরস্কে গত মাসে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দেশটির ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সরকার বলছে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ওই অভ্যুত্থানচেষ্টার মূল পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রই করেছিল।
১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে দেশটির প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর ধারণা। তুর্কি সংবাদমাধ্যম বলছে, ওয়াশিংটন ওই অভ্যুত্থানের সাফল্য চেয়েছিল। এমনকি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে ওই অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য দায়ী করে আঙ্কারার কর্তৃপক্ষ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বিষয়টি প্রচারে এনে তুর্কি সরকার জনমনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ক্ষোভ তৈরি করতে সফল হয়েছে। দেশে ফিরিয়ে এনে গুলেনের বিচার করার চেষ্টা এখনো সফল হয়নি। তুর্কি বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদাগ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গুলেনকে ফেরত না পাঠালে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব ঘৃণায় রূপ নেবে।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ ধরনের মার্কিনবিরোধী মনোভাব তৈরি হলে, সেটি তুর্কি সরকারের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র এখনো তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা মিত্রদেশ হিসেবে আছে। আর এটি তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
আঙ্কারায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বাস চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমাগত দোষারোপের ঘটনায় স্বাভাবিক অবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিন্দুমাত্র সত্যতা ছাড়াই এ ধরনের অভিযোগ করায় তিনি অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ।
অভ্যুত্থানচেষ্টার চার দিন পর তুরস্কের সরকারপন্থী দৈনিক ইয়েনি সাফাক-এর সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুল এক নিবন্ধে লেখেন যে এরদোয়ানকে হত্যার উদ্দেশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ওই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিল।
তুরস্কে মার্কিনবিরোধী মনোভাব ও রাজনীতি নতুন কিছু নয়। ২০০৩ সালে তুর্কি পার্লামেন্ট একটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রকে চরম হতাশ করেছিল। ইরাক হামলায় বিদেশি সেনাদের তুর্কি ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অনুরোধ করেছিল।
ফেতুল্লা গুলেন ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন। তুর্কি সরকার বলছে, গুলেনকে বসবাসের সুযোগ দিয়ে ভালো করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তিনি একজন ‘সন্ত্রাসী’। কারণ, তিনি তুরস্কের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেছেন।
প্যারিসভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বায়রাম বালসি বলেন, এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের’ সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। গুলেনের সংগঠনের পাশাপাশি তুরস্কে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকেও (পিকেকে) যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এরদোগান। সব মিলিয়ে তুরস্কে একধরনের সুনির্দিষ্ট মার্কিনবিরোধী চেতনা বিকশিত হবে—এরদোগান এমনটাই চান—জনগণের কাছে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য।
কেননা, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা সব দেশের রাজনীতিতেই বেশ কার্যকর একটি উপাদান।
অন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, অভ্যুত্থানচেষ্টার সাময়িক ধাক্কা সামলাতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে কেউ কেউ মার্কিনবিরোধী হাঁকডাক দিচ্ছেন। কিন্তু এই কৌশল তুর্কি স্বার্থবিরোধী—এটি উপলব্ধি করে এখনই তাদের শান্ত হওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী চেতনার শিকড় তুর্কি সমাজের গভীরে চলে গেলে, তা বিপজ্জনকই হবে। ট্রান্স-আটলান্টিক জোটে তুরস্কের সদস্যপদ টিকিয়ে রাখাও তখন কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম