বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: তুরস্কের সুপ্রিম নির্বাচন কাউন্সিল ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে।
৩১ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারিভাবে ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচিত হন বিরোধী জোটের প্রাথী একরেম ইয়ামওগলু। ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থী এবং এদেশের ইতিহাসের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত হন।
সরকারি দল একে পার্টি শুরু থেকেই ইস্তানবুলের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছে।
সোমবারের নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কারণে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপির নির্বাচিত মেয়র একরেম ইয়ামওগলু মাত্র একমাস ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করতে পারলেন।
নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী জোট জোর গলায় বলে আসছে যে, তারা সুপ্রিম নির্বাচন কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে বিনা বাক্যে মেনে নেবে। আজকের এই সিদ্ধান্তকে একে পার্টি স্বাগত জানালেও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
নির্বাচন বাতিলের কারণ
একে পার্টি নির্বাচনে ২২৫ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রায় ৩৬০০ পোলিং অফিসারকে বেআইনিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে।
অভিযোগে বলা হয়, তুরস্কের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবশ্যই সরকারি চাকরিজীবী হতে হবে। কিন্তু উল্লেখিত নির্বাচন কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারি চাকরিজীবী নন।
নির্বাচন কমিশন গত প্রায় একমাস ধরে যাচাই বাছাই করে একে পার্টির অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে এবং তারা এই তথ্য প্রমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বাতিলের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
নতুন নির্বাচনের দিন হিসেবে জুন মাসের ২৩ তারিখ রোববার নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রশ্ন হতে পারে, এতো ঠুনকো অভিযোগে এতবড় একটা নির্বাচন কিভাবে বাতিল করে? তুর্কিতে নিরপেক্ষ এবং স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের একটা সুনাম আছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে ফাইনাল হিসেবে ধরা হয়।
এখানে সংসদের কোনো সিদ্ধান্তকে এদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় মানে সাংবিধানিক আদালত বাতিল করে দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশেনর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অন্য কোনো আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অভিযোগের পেছনে একে পার্টির যুক্তি হলো, বেসরকারি ওই কর্মচারীদের যোগসাজসে বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলাফল ওলটপালট করে দেয়া হয়েছে। এর অনেক প্রমাণও ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসেছে। যেমন অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে একে পার্টি কোনো ভোটই পায়নি, ভোটার প্রায় পুরোটাই চলে গেছে বিরোধীদের খাতায়। পরে ব্যালট বাক্স খুলে ওই ভোট পুনঃগণনা করে দেখা গেছে একে পার্টি ওই কেন্দ্রে বিশাল ব্যবধানে জিতেছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল পেপারে তোলার সময় পুরো উল্টোভাবে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ একে পার্টির ভোট সিএইচপির ঘরে আর সিএইচপির ভোট একে পার্টির ঘরে লেখা হয়েছে। এরকম প্রায় কয়েকশ ভোটকেন্দ্রে পরীক্ষা করে বিরোধীদের পক্ষে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ।
নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি
প্রায় দেড়মাস পরে নির্বাচন। বিরোধী দলের পরবর্তী পদক্ষেপ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা কি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের মোকাবেলা করবে নাকি তাদের সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় নামবে।
প্রায় ২৫ বছর পরে ক্ষমতা হাতের মুঠোয় পেয়েও তা হাতছাড়া হওয়ার কষ্ট চাট্টিখানি কথা নয়। এই কষ্ট হজম করে নির্বাচনে যাওয়া। কর্মী-সমর্থকদের আবার জড়ো করে, উৎসাহিত করে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়া সহজ কাজ নয়।
দলীয়ভাবে বিরোধীরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সন্তুষ্ট করা সহজ হবে না। বিরোধী জোটের শরিকদের মধ্যে আছে নানা ধারণার নানা ঘরনার দল। কেউ উগ্রপন্থী, কেউ ডানপন্থী, কেউ বামপন্থী, কেউ কুর্দি জাতীয়তাবাদী, কেউ তুর্কি জাতীয়তাবাদী। তাদেরকে এক ছায়াতলে কতদিন ধরে রাখা যাবে সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বিরোধীদের জন্য।
যদি কিছু অতি উৎসাহী যুবকরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয় এবং ইস্তান্বুলের বড় কোনো ময়দানে জমায়েত হওয়া শুরু করে, তাতে তারা যেমন দেশের ভেতর থেকে সমর্থন পাবে তেমনি পাবে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আরব বিশ্বের প্রত্যক্ষ মিডিয়া সমর্থন এবং পরোক্ষ রাজনৈতিক সহযোগিতা।
সুতরাং সামনের দিনগুলোতে তুরস্কের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদের জন্য অপেক্ষা করছে ধৈর্য এবং বিজ্ঞতার পরীক্ষা।
বাংলা৭১নিউজ/এলএ.বি