জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিশ্বের তিন শীর্ষ দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও জাপান। বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি অর্ডারকৃত জাহাজ নির্মাণ করছে এশিয়ার এই তিন শক্তি। তিন বছর এই খাতে প্রথম স্থান বজায় রাখা দক্ষিণ কোরিয়া এ বছরও সর্বাধিক অর্ডার পেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বিজনেস কোরিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, এ বছরের প্রথম দুই মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়া জাহাজ নির্মাণের মোট অর্ডার পেয়েছে ২.৫ মিলিয়ন সিজিটি (জাহাজের আকার ও বহন ক্ষমতা), যা মোট বাজারের ৫২ শতাংশ। চীন পেয়েছে ১.৯ মিলিয়ন সিজিটি, যা মোট বাজারের ৪০ শতাংশ এবং জাপান পেয়েছে ০.৩২ মিলিয়ন সিজিটি, যা মোট বাজারের ৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। দ্রুত বিকাশমান এই খাতে এগিয়ে যায় জাপানের নেতৃত্বে উন্নয়নশীল এশিয়া। বর্তমানে জাপানের অবস্থান তৃতীয়, শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া আর দ্বিতীয় চীন। উদীয়মান বিশ্বের ভারত, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও তুরস্কও অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পে।
১৯৫০ সালে জাপানের নেতৃত্বে জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিকশিত হতে শুরু করলেও নব্বইয়ের দশকে এসে এগিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০৮-২০১০ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে অতিক্রম করে বিশ্বের শীর্ষ জাহাজ নির্মাতা দেশ হয় চীন। কিন্তু তিন বছর ধরে জাহাজের সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্ডার বাগিয়ে নিয়ে এই বাজারে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। গুণগত মান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ দেশটিকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী জাহাজ নির্মাণে বিশ্ববাজারে এই দেশটির অংশগ্রহণ ২৯ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৩ শতাংশ।
এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়ার ওভারসিজ ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানায়, ২০২০ সালের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় এ বছর জাহাজ নির্মাণের অর্ডার বাড়বে ১০০ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লার্কসন রিসার্চ সার্ভিসেস জানায়, ২০২০ সালে বিশ্বে জাহাজ নির্মাণের মোট অর্ডার হয় ১৯.২৪ মিলিয়ন সিজিটি (বহন ক্ষমতা বা জাহাজের আকার)। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ১৮৭টি জাহাজ নির্মাণে ৮.১৯ মিলিয়ন সিজিটির অর্ডার পায়, যা বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণ অর্ডারের ৪৩ শতাংশ। গত বছর চীনের মার্কেট শেয়ার ছিল ৪১ শতাংশ আর জাপানের ৭ শতাংশ।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই সাফল্যের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্য সংযোজনী জাহাজ তৈরির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত দক্ষতা রয়েছে। এ কারণে যাঁরা উচ্চমানের ভেসেলের অর্ডার দেন তাঁরা দক্ষিণ কোরিয়ার দিকেই বেশি আগ্রহী। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাতারা ৩৬টি বড় আকারের এলএনজি বহনকারী জাহাজের অর্ডার পায়। বিশ্বে এ জাতীয় জাহাজ তৈরির মোট অর্ডার হয় ৪৯টি।
অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার দখলেই ছিল ৭০ শতাংশ এলএনজি বহনকারী বড় জাহাজের অর্ডার। বড় বড় জাহাজ বিশেষ করে ক্রুজ লাইনার, সুপার ট্যাংকার, এলএনজি ক্যারিয়ার, ড্রিল শিপ এবং বড় কনটেইনার জাহাজ নির্মাণে নেতৃত্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপইয়ার্ড দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান। যার মালিকানায় রয়েছে দেশীয় কম্পানি হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ।
ক্লার্কসন রিসার্চ সার্ভিসেস পূর্বাভাসে জানায়, বিশ্বে টিকা সরবরাহের পাশাপাশি করোনা মহামারি কাটতে থাকায় ২০২১ সাল জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য আরো সম্ভাবনাময় হবে। গত বছরের চেয়ে বৈশ্বিক অর্ডার ২৩.৭ শতাংশ বাড়বে। এতে বেশির ভাগ অর্ডার বাগিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দক্ষিণ কোরিয়া। সূত্র : কেবিএস ওয়ার্ল্ড, সিনহুয়া, বিজনেস কোরিয়া।
বাংলা৭১নিউজ/আরকে