শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
রাজশাহীতে শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুতুল দাহ বাস উল্টে নিহত ১, ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ বাজেট পাস কাল থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এইচএসসি পরীক্ষা শুরু কাল, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ দিতে গিয়ে সংঘাতে পুলিশ-বিবাদি! মুম্বাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ চাঁদপুরে একের পর এক দেখা মিলছে রাসেলস ভাইপারের মুসলিম দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকলে গাজার বিপর্যয় রোধ করা যেত ঢাকায় আজ বিএনপির সমাবেশ, আ. লীগের আলোচনা সভা ইরানে চলছে ভোট গণনা, এগিয়ে কট্টরপন্থি জালিলি সক্রিয় মৌসুমি বায়ু, ৬ বিভাগে বৃষ্টি থাকবে ৩ দিন গাজায় ৬ লাখেরও বেশি শিশু ৮ মাস ধরে স্কুলে যেতে পারছে না: জাতিসংঘ ভিনিসিউস জাদুতে বড় জয় ব্রাজিলের এসএসএফ সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালালে ‘ধ্বংসকারী যুদ্ধ শুরু হবে’ সাগরে লঘুচাপ, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত চট্টগ্রামে মার্কেটে ভয়াবহ আগুন, নিহত ৩ ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু: ওবায়দুল কাদের বিষয় ছাড়া কীভাবে ডায়ালগ হবে? প্রধানমন্ত্রীকে ড. ইউনূসের প্রশ্ন সব ধরনের সবজির বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল

তিস্তা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে কি সিকিমের কারণেই?

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ২৯১ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বাংলাদেশ ও ভারতের সুসম্পর্কে কাঁটা হয়ে আছে তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি। বর্তমান সরকার দুই মেয়াদপার করে টানা তুতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেছে। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আগামী মাসেই ভারত সফর করবেন। তিনি তার এই সফরে শুধুই কী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে যাবেন, নাকি দু’দেশের অমিমাংসিত কিছু বিষয়াদি নিয়েও কথা বলবেন? তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার ওই সফরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি আলোচনায় আসবে। তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে চুক্তিটি হওয়ার দাঁড়প্রান্তে যেয়েও আঁটকে আছে, সেটির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে সকলেই পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দোষারোপ করছেন।

আর মমতা বলছেন, তার রাজ্যই শুষ্ক মৌসুমে ঠিকমত তিস্তার পানি পাচ্ছে না। যেটুকু পানি তারা পান সেখান থেকে ভাগাভাগি হলে পশ্চিমবঙ্গ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে তিস্তার পানি কারা কিম্বা কোন রাজ্য সরিয়ে নিচ্ছে? এক্ষেত্রে তিস্তার উৎপত্তিস্থল সিকিমের দিকেই সকলের আঙ্গুল।

যদিও সিকিমের মূখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমরা যেভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বানিয়েছি তাতে নদীর পরিবেশ বা বাস্তুতন্ত্রের কোনও ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।তিনি বলেন, “তিস্তার ভাঁটিতে যে সব অঞ্চল রয়েছে (অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) তাদের উদ্বেগের প্রতি  খেয়াল রেখেই সিকিম সব কিছু করছে।এই যদি পরিস্থিতি তাহলে তিস্তার পানি যায় কোথায়?

এ নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেনটি তুলে ধরা হলো:

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কে এই মুহুর্তে অস্বস্তির কেন্দ্রে আছে যে তিস্তা নদী, সেটি ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে তাদের কোনও ভূমিকা নেই বলে বিবিসির কাছে দাবি করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং।

তিস্তা নদীর উৎপত্তি ভারতের পার্বত্য অঙ্গরাজ্য সিকিমেই, আর সিকিম তিস্তার ওপর একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার ফলেই এই নদীর প্রবাহ ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে বলে বহু পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানী মনে করে থাকেন।

বস্তুত ‘তিস্তাতে একেবারেই জল নেই’ – এই যুক্তি দেখিয়েই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন।

কিন্তু বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী মি চামলিং বলেছেন, “আমরা যেভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বানিয়েছি তাতে নদীর পরিবেশ বা বাস্তুতন্ত্রের কোনও ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।”

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিংসিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং।

তিনি আরও দাবি করেছেন, সিকিম এতটাই দায়িত্বশীলভাবে তিস্তার ওপর বিভিন্ন জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করেছে যে তাতে গোটা রাজ্যের মাত্র সাতটি পরিবারকে আশ্রয়চ্যুত হতে হয়েছে।

তিস্তার ভাঁটিতে যে সব অঞ্চল রয়েছে (অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) তাদের উদ্বেগের প্রতিও সিকিম সব সময় খেয়াল রেখে চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী চামলিং ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন।

যদিও তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন, কারণ একটি ‘আন্তর্জাতিক বিষয়’ নিয়ে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তবে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন, বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন ওই রাজ্যের অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

তিস্তার বুক থেকে ট্রাকে করে বালি তোলা হচ্ছে। শিলিগুড়ির কাছে, পশ্চিমবঙ্গে।তিস্তার বুক থেকে ট্রাকে করে বালি তোলা হচ্ছে। শিলিগুড়ির কাছে, পশ্চিমবঙ্গে।

তিস্তার প্রবাহ পর্যালোচনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে কমিশন গঠন করেছিল, তার প্রধান ও নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র যেমন পরিষ্কার বলছেন, “এই প্রকল্পগুলোর জন্যই তিস্তায় ‘লঙ্গিচিউডিনাল ডিসকানেক্টিভিটি’ তৈরি হয়েছে – সোজা কথায় নদীটা জায়গায় জায়গায় একেবারে শুকিয়ে গেছে!”

ড: রুদ্র বিবিসিকে আরও বলছিলেন, “নদী মানেই কিন্তু শুধু জলের প্রবাহ নয় – তার সঙ্গে সেডিমেন্ট লোড থাকে। যখনই সেই নদী আটকে আপনি হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট গড়বেন, নদী প্রথমেই সেই সেডিমেন্ট লোডটা সেখানে ফেলে দেবে।”

“আর তারপর কনডুইটের মধ্যে নিয়ে গিয়ে টার্বাইনে ঘোরানোর পর যে জলটা আবার নিচে মেশানো হবে, ততক্ষণে তার অনেক গুণগত পরিবর্তন হয়ে গেছে – ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারগুলো বদলে গেছে।”

“বায়োডাইভার্সিটিরও প্রচুর ক্ষতি হবে – কারণ নদীর প্রবাহে যে সব প্রাণ বেঁচে থাকে, তারা কখনও স্থির জলে বাঁচতে পারে না”, জানাচ্ছেন তিনি।

তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিতিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

কল্যাণ রুদ্রর মতে, ঠিক এই কারণেই তিস্তাকে দেখলে এখন বোঝা যাবে কেন এই নদীর প্রবাহে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন বাঁধের ঠিক নিচে নদীটা প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।

মোট ৩১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য তিস্তার, তার সিকিম অংশে ‘মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যায়’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

কল্যাণ রুদ্র যেমন বলছিলেন, “সাড়ে বারো হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা তিস্তা অববাহিকার – তার মধ্যে সিকিমের অংশ খুবই টেকটোনিক্যালি ফ্র্যাজাইল, অর্থাৎ ভূমিকম্পের সম্ভাবনা খুবই বেশি। এরকম একটা অঞ্চলে এতগুলো হাইডেল পাওয়ার প্রোজেক্ট করা একেবারেই উচিত হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস।”

তবে তিস্তা নিয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই বিতর্ক আলাদা মাত্রা পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে, কারণ তিস্তার প্রবাহ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন তার সঙ্গে মি চামলিংয়ের বক্তব্য একেবারেই মিলছে না।

তিস্তার পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের মানুষ উঠে এসেছেন উঁচু অঞ্চলে। নীলফামারি, জুলাই ২০১৬তিস্তার পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের মানুষ উঠে এসেছেন উঁচু অঞ্চলে। নীলফামারি, জুলাই ২০১৬।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশ কিন্তু এখনও চাইছে যত দ্রুত সম্ভব ভারতের সঙ্গে তাদের তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তি হওয়া প্রয়োজন।

তিস্তাতে হয়তো পর্যাপ্ত জল নেই, ঢাকাও এই বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তাদের বক্তব্য হল, ওই নদীতে যতটুকুই জল থাকুক সেটা দুই দেশের মধ্যে আধাআধি ভাগ হওয়া দরকার।

ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, “চুক্তির জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

“তিস্তায় আট আনা জল থাকলে চার আনা-চার আনা ভাগ হবে, আর ছ’আনা থাকলে দুই দেশে তিন আনা-তিন আনা করে পাবে – এটা নিয়ে তো কোনও বিতর্ক থাকতেই পারে না!” তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওই অবস্থানই এখনও অপরিবর্তিত আছে।

বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনবাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

এদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সদ্যই টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে তৎপরতা বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও ভারতের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আমন্ত্রণে আগামী মাসেই ভারত সফর করবেন বলে কথা রয়েছে।

যদিও এটাকে মূলত সৌজন্য সফর হিসেবেই দেখা হচ্ছে, তার পরেও সেই সফরে অবধারিতভাবেই তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে বলে দুদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলোই জানাচ্ছে।

বাংলা৭১নিউজ/এসকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com