বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
২০২৪ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বছর: আসিফ মাহমুদ ইএফটি উদ্বোধন, বছরের প্রথমদিনে বেতন পেলেন এমপিও শিক্ষকরা নতুন বছরে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার খুলল এস আলমের বন্ধ হওয়া ৯ কারখানা ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল ইউক্রেন বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা মেট্রোরেলের লাইনে ফানুস, রাতভর পরিষ্কার করলো ডিএমটিসিএল হিন্দুরা নয়, আগস্টের পর ভারতে বেশি গেছেন মুসলিমরা বছরের প্রথম দিনে রাজধানীর বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ইইউতে ফিরতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় তুরস্ক ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮ জন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় ভূমি বিষয়ক সকল হয়রানি দূর করার অঙ্গীকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সমন্বয়ক গ্রেফতার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা উচ্ছ্বাস-উল্লাসে নতুন বছর উদযাপন পুলিশের জ্যাকেট পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাংবাদিক সজীবকে সিলেটের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে রংপুর রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা শিথিল চান সংশ্লিষ্টরা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

পার্বত্য তিন জেলার ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা শিথিলতা চান সংশ্লিষ্টরা। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি এবং বাঙালিদের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এবং তাদের অবস্থা বেহাল দাবি করে এই প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত জনগণের মধ্যে ভাষাগত অনেক ভিন্নতা থাকায় একজনের ভাষা অন্যজন বুঝতে পারে না। তাই বিদ্যালয়গুলোতে স্ব স্ব ভাষাভাষীর শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এই শিথিলতা চান তারা। এছাড়া শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ লাভের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা ভাষায় দক্ষতা অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বলেছেন তারা।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বৈঠক উত্থাপিত কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, মন্ত্রী ও কমিটির সদস্য বীর বাহাদুর উ শৈ সিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগ প্রক্রিয়া জেলা পরিষদের পরিবর্তে জেলা প্রশাসকের অধীনে দেওয়ায় উষ্মা করে এটা তিন জেলা পরিষদের নিকট ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেন। তিনি পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘একই পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত জনগণের মধ্যে ভাষাগত অনেক ভিন্নতা রয়েছে বিধায় একজনের ভাষা অন্যজন বুঝতে পারে না। তাই বিদ্যালয়গুলোতে স্ব স্ব ভাষাভাষীর শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ লাভের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা ভাষায় দক্ষতা অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।’

সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যমান নীতিমালার বাইরে আরও ২/৩ জন প্রতিনিনিধ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার ব্যাপারে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা আপত্তি জানিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল, যা করা হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে দেশের ৬১টি জেলায় যেভাবে পরিপত্র/আদেশ যায়, ঠিক একইভাবে তিন পার্বত্য এলাকায় পরিপত্র/আদেশ যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।’

একটি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জনের জন্য মাত্র ১০ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ লাভের লক্ষ্যে বিশেষ বিবেচনায় স্থানীয়/আঞ্চলিক ভাষার শিক্ষকের অতিরিক্ত পদ জরুরি ভিত্তিতে সৃষ্টির পুনঃপ্রস্তাব করেন।

সংসদ সদস্য এ. বি. এম ফজলে করিম চৌধুরী জানান, তার নির্বাচনী এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্য থেকে দপ্তরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই পার্বত্য এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে দপ্তরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সেটি অনুসরণ করা যেতে পারে। পার্বত্য এলাকার ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বিশেষ বিবেচনায় বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থাপন প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলোকে জাতীয়করণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য এলাকা বিশেষায়িত হওয়ায় ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, সেটি বাদ দিয়ে যদি সমতলের ন্যায় চিন্তাভাবনা করা হয় তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি এবং বাঙালিদের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এবং তাদের অবস্থা বেহাল।’

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠী শিক্ষায় অনগ্রসর। কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্বাতকোত্তরধারী (সম্মান) অর্জনকারী শিক্ষক পদে প্রার্থীর সংখ্যা খুবই কম। তাই শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে শিক্ষালাভ করতে পারবে। তা না হলে পাবর্ত্য অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।’

আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সৌখিন চাকমা বলেন, ‘১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তিটি এখন শুধুমাত্র একটি চুক্তি নয়, এটি পার্লামেন্টারি আইনে পরিণত হয়েছে এবং উক্ত আইনের অধীনে তিন পার্বত্য জেলার কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে বিধিমালাও প্রণীত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৪২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ক্ষেত্রে সকল শর্ত পূরণ করেছে।’

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রবিধানমালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা রয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অভিযোগ, অনুযোগ বা আপত্তি উত্থাপিত হয়নি।’

জেলা পরিষদের প্রবিধানের বাইরে আরও প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে বিধায় প্রবিধান অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই বছর পূর্বেও জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগ সম্পন্ন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় সমন্বয়হীনতা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত তা সমাধান হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন নারী শিক্ষক তেমন পাওয়া যাবে না। নারীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এক ধাপ নিচে হলে শিক্ষক নিয়োগ সহজতর হবে। স্ব স্ব ভাষায় বেশিরভাগ পঞ্চম শ্রেণি পাস এবং যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারা নিজস্ব ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগতমান রক্ষার লক্ষ্যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বর্তমানে ডিগ্রিধারী যুবকের অভাব না থাকায় শিক্ষক নিয়োগে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে মঙ্গলবারের বৈঠক থেকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির অধীনে প্রণীত প্রবিধান/নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি নিয়োগ প্রক্রিয়া জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে জেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া পার্বত্য এলাকায় ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বিশেষ বিবেচনায় ‘বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে’ অন্তর্ভূক্ত করে জাতীয়করণের পুনরায় সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে কর্মরত প্রধান শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ৪৮ জন, সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৮৯ জন, প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ৪৬৯টি জন এবং সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ ১ হাজার ১১৬টি। এসব শূন্যপদ পূরণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com