মৌলভীবাজারের রাজনগরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে তিনদিন ধরে বিদ্যুৎহীন আছে উপজেলার ৩১ গ্রাম। গ্রাহকদের অভিযোগ, স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বারবার গিয়েও প্রতিকার মিলছে না এর।
জানা যায়, মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) থেকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এছাড়া বুধবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ের পর থেকে প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সদরের আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সংযোগ স্বাভাবিক হলেও এখনো বেশিরভাগ স্থানে নেই বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ অফিস জানিয়েছে, উপজেলার দশটি ফিডে বিদ্যুৎ সচল আছে। তবে গ্রামের ভেতরের সংযোগ লাইনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মিটারসহ লাইন ছিড়ে গেছে বহু জায়গায়।
উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বালিগাঁও, সুনাটিকি, মেদিনীমহল, জামুরা, আলিচরগাঁও গ্রাম। টেংরা ইউনিয়নের দক্ষিণ টেংরা, ইলাশপুর, দত্তগ্রাম, ডেফলউড়া, মনসুরনগর ইউনিয়নের আশ্রাকাপন, বকশিকোনা, পরচক্র, নেয়াগাঁও, গ্রাম মনসুরনগর, মদিপুর।
আর কামারচাক ইউনিয়নের কামারচাক, প্রেমনগর। পাচগাঁও ইউনিয়নের দোগাঁও, পইতুরা, পশ্চিমভাগ, বাদেকুবজার আমিরপুর। রাজনগর সদর ইউনিয়নের মুরালী, বাগাজুড়া, মশরিয়া, দাশটিলা, ভুজবল, মজিদপুরসহ প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে নেই বিদ্যুৎ।
উপজেলার মুন্সিবাজার, ফতেপুর, পাঁচগাও, টেংরা ও সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর পড়ে আছে গাছ। কোথাও লাইন পড়ে আছে মাটিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।
মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বালিগাঁও গ্রামের তোফায়েল মিয়া বলেন, ‘গত তিনদিন যাবত বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে জানালেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। লাইনে কাজ চলছে জানিয়ে ফোন কেটে দেন তারা।’
এদিকে একই ইউনিয়নের সুনাটিকি গ্রামের নূরুল আমিন বলেন, বিদ্যুৎহীন অবস্থায় প্রায় পঞ্চাশ ঘণ্টা ধরে আছি। তবে বিদ্যুৎ অফিসের কোনো তৎপরতা দেখছি না।
সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, ‘তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। লাইনের ওপর গাছ পড়ে আছে। কিন্তু বারবার বিদ্যুৎ অফিসে জানানোর পরও তারা একবারও আসেননি।’
শুক্রবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজনগর বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন বকশিকোনা গ্রামের রুজেল মিয়া, আশ্রাকাপন গ্রামের সত্যদেব, মধিপুর গ্রামের মো. রায়হান।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েও প্রতিকার মিলছে না। তাদের বারবার ফোনে কল দিলেও ধরেন না। দুইদিন ধরে আমরা অন্ধকারে রয়েছি’।
এদিকে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু তা জানাতে পারেনি খোদ বিদ্যুৎ অফিস।
রাজনগর বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম তারেক মাহমুদ বলেন, ‘৩০ মার্চের ঝড়ে লাইনের যে ক্ষতি হয়েছিল তা ঠিক করে দেয়া হয়। পরে ওইদিনই পুনরায় ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার উপজেলার ৭০ শতাংশ লাইন সচল করা হবে। শনিবার (৩ এপ্রিল) পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করা সম্ভব হবে’।
রাজনগর বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করতে সময় লাগবে। লাইন সচল করার কাজ চলছে।
বাংলা৭১নিউজ/পিকে