বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বেশ কিছু দিন ধরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান চালিয়ে আসছে। এসব অভিযানে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীতে হাজার হাজার গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এসব অবৈধ সংযোগ প্রদানকারী কিংবা এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তারা। ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর আবার সংযোগ স্থাপন করার মতো ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর লোকজনের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালীরা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও তিতাস গ্যাসের একশ্রেণির কর্মীর যোগসাজশে এসব সংযোগ দেয়া হয়। আর এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগে সাহায্য করছে তিতাসের লোকজন। এর সঙ্গে পাচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দালালের পৃষ্ঠপোষকতা। অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও শাস্তি হচ্ছে না জড়িত ব্যক্তিদের। ফলে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ সংযোগ।
তবে তিতাস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা নিয়মিতই অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করছেন।
তিতাসের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত বুধবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের পশ্চিম জয়দেবপুর এলাকায় গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা শাহরীন মাধবীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সেখানে ৫০০ মিটার এলাকায় অবৈধ তিন ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ পাইপ উচ্ছেদ ও সাত শতাধিক বাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় অবৈধভাবে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পাইপ, রাইজার ও অন্যান্য মালামাল।
আগের দিন মঙ্গলবার গাজীপুরে কাশিমপুরের ভারান্ডা এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকার সাত শতাধিক গ্রাহকের অবৈধ গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
একই দিন সাভারেও অভিযান চালায় তিতাস। তিন কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় সেদিন। তবে কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। অভিযানে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও গ্যাসপাইপ জব্দ করা হয়। সাভার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হাদী আবদুর রহিমের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ পাইপ জব্দ করা হয়।
অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্নের অভিযান ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হবে বলে জানান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাভার জোনের উপব্যবস্থাপক।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাস্তি নিশ্চিত না হলে বারবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও তা থামানো যাবে না। অতীতে তা-ই হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ম. তামিম জানান, “অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে তিতাসের লোকজনই জড়িত। অবৈধ সংযোগে তারা সাহায্য করছে। সুতরাং তারা কিভাবে এটি দূর করবে।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই জ্বালানী বিশেষজ্ঞ বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক দালাল রয়েছে, যাদের কারণে এসব বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসন শাস্তিও দিতে পারছে না। এটা বন্ধের একমাত্র উপায় বিকল্প ফুয়েল ব্যবহার করা। সেটা হতে পারে এলপিজি। এটা ব্যবহার করা গেলে অবৈধ সংযোগ থাকবে না।”
জানতে চাইলে তিতাসের কোম্পানি সচিব মোশতাক আহমেদ বলেন, “অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ্। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। অনেককে শাস্তিও দেয়া হয়েছে।’
গ্যাস সংকট সামাল দেওয়ার জন্য বর্তমান মহাজোট সরকার আগের মেয়াদের শুরুতে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই আবাসিক নতুন সংযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এরপর সারা দেশে চোরাই সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিল আদায় করছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারি এ নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরেই গত দুই বছরে এমন অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে আড়াই সহস্রাধিক।
একই কায়দায় নরসিংদী শহরসহ শিবপুর; কুমিল্লার দাউদকান্দি; নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ; ঢাকার সাভার, আশুলিয়া; গাজীপুরের টঙ্গী, শ্রীপুর এলাকায় মাইলের পর মাইল অবৈধ পাইপলাইন বসিয়ে হাজার হাজার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/বিএইচ