ধানমণ্ডি লেক সার্কাসের পারে বসেছে রংতুলির আসর। শিল্পীদের জাদুময় হাতের ছোঁয়ায় শৈল্পিক নান্দনিকতায় মূর্ত হয়ে উঠছে আরবি হরফগুলো। ক্যানভাসজুড়ে তৈরি হচ্ছে মুগ্ধকর ক্যালিগ্রাফি। পথচারীরা থেমে থেকে দেখছেন তাঁদের কারুকাজ।
কেউ উদ্যোগী হয়ে এসে জিজ্ঞাসা করছেন, ক্যালিগ্রাফিগুলো বিক্রি করা হবে কি না। তিনি কিনতে চান।
কওমি ধারার কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা ‘শৈল্পিক কওমী’ একটি শিল্পনির্ভর অনলাইন প্ল্যাটফরম। এটি তাদের পঞ্চম আউটডোর আর্টক্যাম্প। এতে অংশ নিয়েছেন ৬০ জন শিল্পী। আর্টক্যাম্পের একজন উদ্যোক্তা মোল্লা হানিফ বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি ক্যালিগ্রাফি চর্চা শুরু করি। তারপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে একাই আউটডোরে ক্যালিগ্রাফি আঁকতে শুরু করি। ২০২০ সালের শেষ দিকে অনলাইন প্ল্যাটফরম শৈল্পিক কওমীর পথচলা শুরু। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমি এবং আহসান রাফি শৈল্পিক কওমীর উদ্যোগে আউটডোর আর্টক্যাম্প করার পরিকল্পনা করি। উদ্দেশ্য ছিল জড়তা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসা। আমরাই প্রথম আউটডোরে ক্যালিগ্রাফি শুরু করলাম। ’
শৈল্পিক কওমী এরই মধ্যে পাঁচটি আউটডোর আর্টক্যাম্প আয়োজন করেছে। প্রথম আয়োজনটি হয়েছিল ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। সেই আয়োজনে ছিল মাত্র আটটি ক্যানভাস। সর্বশেষ আয়োজিত পঞ্চম আর্টক্যাম্পে ক্যানভাস ছিল ৩০টি, শিল্পী ছিলেন ৬০ জন। এঁদের বেশির ভাগই কওমি মাদরাসা পড়ুয়া শিল্পমনা তরুণ আলেম।
আয়োজনের আরেকজন উদ্যোক্তা আহসান রাফি বলেন, ‘প্রতিটি আউটডোর আর্টক্যাম্পের দৈর্ঘ্য হয় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এখানে আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ক্যালিগ্রাফি চর্চা করি। নির্দিষ্ট কোনো অ্যাসাইনমেন্ট থাকে না। তবে এতটুকু বলে দেওয়া হয়, যে যে কাজই করুক, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। তারপর যার কাজটি সবচেয়ে সুন্দর হবে, তাকে পুরস্কৃত করা হবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব আউটডোর আর্টক্যাম্পে একজন আরেকজনের কাজ দেখার সুযোগ পান। এটা হলো শিল্পীর লাভ। এ ছাড়া আউটডোর আর্টক্যাম্পে ক্যালিগ্রাফি করা হলে মানুষের চোখে পড়ে। আমরা মূলত মানুষকে জানাতে চাই, ইসলাম ও শিল্পের মধ্যে বিরোধ নেই। ইসলামেও রয়েছে শুদ্ধ শিল্পচর্চার উপাদান। ’
শিল্পীরা জানান, দেশে দিন দিন ক্যালিগ্রাফির কদর বাড়ছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে এই শিল্পের প্রতি মানুষের আলাদা একটা শ্রদ্ধা আছে। মাঝেমধ্যেই জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমিতে ক্যালিগ্রাফির এক্সিবিশন হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ