বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যার আগে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
আজ সোমবার রাত ৮টায় কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, “সোহাগী জাহান তনুর প্যান্টি, কাপড়, শরীরের অংশবিশেষ, ভেজাইন্যাল সোয়াব ও রক্তের ডিএনএ প্রতিবেদনে তিন ব্যক্তির বীর্য পাওয়া গেছে। প্যান্টিতে থাকা রক্ত তনুর বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছি, তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। বেশ কিছু তথ্য, উপাত্ত, মুঠোফোনের এসএমএস ও জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে আমরা আসামি শনাক্ত করতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। ”
নাজমুল করিম খান বলেন, “তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এবং মামলার তদন্তের স্বার্থে মেডিকেল বোর্ডকে ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহের জন্য সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে, ততই এ মামলার অগ্রগতি দেশবাসীকে দেখানো যাবে বলেও আশা করছি।”
বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সংস্থা সিআইডি’র বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, “আমাদের ল্যাবে যে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে, তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।”
উল্লেখ্য, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের ঝোপের মধ্যে তনুর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন মামলা করে। মামলাটি পুলিশ, ডিবির পর বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ মার্চ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ৩০ মার্চ তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে দেয়া প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তনুর কাপড়, দাঁত, নখের ডিএনএ ও ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রতিবেদন চেয়ে সিআইডির কাছে চিঠি দেয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদন সরবরাহে সিআইডি অপারগতা প্রকাশ করে আসছিল। সর্বশেষ গত রোববার ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে চিঠি দেন লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ওরফে কেপি সাহা।
ওই চিঠিটি অবগতির জন্য কুমিল্লার ১নং আমলী আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়। এতে সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য পুনরায় কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর তদন্ত সংস্থা সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত নমুনার ৪টি দাঁত, ৪টি ভেজাইন্যাল সোয়াব, ডিএনএ অ্যানালাইসিস ও পরীক্ষার প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তবে সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে আদালতে চিঠির অনুলিপি দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি আদালত।
এ বিষয়ে সদর কোর্টের জিআরও বাদল রায় সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি প্রেরণ করেছেন, আর আদালতকে ওই চিঠির অনুলিপি দিয়েছেন।
আদালতের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার একমাত্র এখতিয়ার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার, চিকিৎসকের নয়। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের ৪৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
বাংলা৭১নিউজ/পার্সটুডে