সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চিপসের প্যাকেট ১, ডাবের খোসা ও দইয়ের পাত্র ২ টাকায় কিনবে ডিএনসিসি সিরাজগঞ্জে গ্যাস লাইনের পাইপ স্থাপনের সময় মাটিচাপা পড়ল শ্রমিক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চুয়াডাঙ্গা-যশোরে স্বস্তির বৃষ্টি ১০ মে ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ইলিশের উৎপাদন বেড়ে ৫.৭১ লাখ টন: মন্ত্রী চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সুন্দরবনে আগুন কেন, গভীরভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর লোডশেডিং আগের তুলনায় কমেছে, দাবি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপথ নিলেন লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বোবা ছেলেকে কুমিরের মুখে ফেললেন নারী ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক মহড়ার নির্দেশ পুতিনের চট্টগ্রামে কালবৈশাখীর তাণ্ডব : সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক, নিজেরাই সবল হতে চায় প্রাথমিকে মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সাক্ষাৎ ধামরাই ঝড়ে টিনের চালা ভেঙে পড়ে দুই নিরাপত্তারক্ষী নিহত হিলি দিয়ে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মাঠে কাজ করছিলেন স্বামী, খাবার দিতে গিয়ে বজ্রপাতে গৃহবধূ নিহত

ঢাকায় পানির কষ্ট বছরভর

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: মাহমুদা বেগম ছেলে ও স্বামী নিয়ে রাজধানীর মহাখালীতে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচ) জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে ভাড়া থাকেন। তাঁর পানির কষ্ট বছরভর। খর বৈশাখে তা প্রকট হয়েছে।

মাহমুদা বললেন, ‘এক দিন গোসল করি তো দুই দিন গোসল না করে থাকি। এই গরমে নিজের গায়ের গন্ধ নিজেই সহ্য করতে পারছি না।’

বাড়িওয়ালাসহ মাহমুদারা ছয়টি পরিবার একটি চৌবাচ্চার পানি ব্যবহার করে। চৌবাচ্চাটিতে অবৈধভাবে ওয়াসার পানির নল দেওয়া। আগে নল দিয়ে দিনে দুবার পানি আসত। ছয়-সাত মাস ধরে পানি আসছে অনিয়মিত। তা-ও দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনায় ভাসা। ওয়াসার লাইনের সঙ্গে একটি চাপকল যুক্ত আছে। সেটাতেও পানি আসে না।

ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন এলাকার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। সরকারের ২০১৪ সালের শুমারি বলছে, এদের সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বস্তিতে বাস করে। বস্তিবাসীর এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক আছে। নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, ২০০৫ সালে মোটামুটি একই এলাকায় শুমারি করে তাঁরা বস্তির জনসংখ্যা পেয়েছিলেন ৩৫ লাখ। শুমারিটি করেছিল বেসরকারি সংস্থা নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস)। অধ্যাপক নজরুল বলছেন, বস্তিবাসীর সংখ্যা এখন অল্পবিস্তর কমতে পারে। তবে এত আকাশ-পাতাল ফারাক হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ বা ওয়াসার। কর্তৃপক্ষটি অবশ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেও পানি দেয়।

ঢাকায় ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকার আয়তন প্রায় ৩৫০ বর্গকিলোমিটার। ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকাবাসীর মাথাপিছু দৈনিক পানির চাহিদা ১৪০ লিটার।

২৮ মার্চ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছিলেন, ৮৭২টি গভীর নলকূপ ও ৫টি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে ঢাকার দৈনিক পানির চাহিদার পুরোটাই পূরণ করছে ওয়াসা। কিন্তু পানি নিয়মিত পাওয়া এবং পানির মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।

এদিকে সাধারণভাবে ঢাকার বস্তিগুলো ওয়াসার বৈধ সংযোগের আওতায় নেই। একটি বেসরকারি সংস্থা কিছু বস্তিতে বৈধ সংযোগের ব্যবস্থা করেছে। সংস্থাটি বলছে, বস্তির মানুষ দিনে মাথাপিছু ২০ লিটারের বেশি পানি পায় না।
দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, ঢাকা ওয়াসার সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা ২৪০ কোটি লিটার। আবাসিক এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ চাহিদা অনুযায়ী পানি পায় না। বস্তিতে পায় না প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ মানুষ।

বস্তিবাসীর বঞ্চনা
মহাখালীর আইপিএইচ বস্তিতে মাহমুদা বলেছিলেন, ‘আজকাল দিনে একবার যে পানি আসছে তা নোংরা। ওই পানি দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না।’ তিনি বললেন, খাওয়া, ধোয়া ও গোসলের পানি আইপিএইচ অফিসের পাশের পাম্প থেকে কলসি ও প্লাস্টিকের পাত্রে করে প্রতিদিন বয়ে আনছেন।

এই বস্তিতে প্রায় তিন হাজার পরিবারের বাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের বস্তি শুমারি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বস্তি আছে। সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গায় কাঁচা-পাকা জীর্ণ বাড়িতে ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঁচটি বা তার চেয়ে বেশি পরিবার বাস করলে সেটা বস্তি বলে বিবেচ্য।
আইপিএইচ বস্তির মো. আবদুল কাইয়ুম প্রিমিয়ার ব্যাংকে ওয়াসার সর্বশেষ ৪৪৫ টাকা পানির বিল পরিশোধ করেছেন গত ১১ মার্চ। গত চার বছরে তাঁর পরিশোধিত বিলের কপি অনুযায়ী, সাত সদস্যের পরিবারটি অধিকাংশ মাসে ৩১ হাজার লিটার পানি ব্যবহার করে চলেছে। কাইয়ুমের পরিবার কিন্তু এযাবৎ কখনো কোনো পানি পায়নি।
অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মচারী বলেন, ‘পানির আশায় টাকা দিয়ে যাচ্ছি। ওয়াসার লোকজন আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছে।’
২০১৪ সালে ওয়াসার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আইপিএইচ বস্তির বাসিন্দাদের পানির সংযোগ ও মিটারের জন্য আবেদন করতে বলেছিলেন। কমপক্ষে ৫০টি পরিবার আবেদন করে। অনেকে চাহিদাপত্রের (ডিমান্ড নোট) টাকাও জমা দেন। সেই থেকে তাঁদের কাছে পানির বিল আসছে।
বস্তিতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান আছে জুলহাস মিয়ার। তিনি বলেন, ওয়াসার লোকজন ২০১৪ সালে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে বাসায় মিটার দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পানির সংযোগও দেয়নি, পানিও আসেনি। প্রতি মাসে মুঠোফোনের খুদে বার্তায় পানির বিল আসে। এক বছর বিল দিয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন জুলহাস।

অবৈধ বসতিতে বৈধ পানি
রাজধানীর সাততলা বস্তি গড়ে উঠেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জমিতে। এই বস্তিতে বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই, বৈধ গ্যাস-সংযোগও নেই। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) সহায়তায় এখানে বৈধ পানির সংযোগ এসেছে। বস্তির চৌধুরীপাড়ায় কাঠমিস্ত্রি লিটনের নামে পানির সংযোগ। সেখান থেকে সাতটি পরিবার পানি নেয়। একটি পরিবার শহীদ খলিফার। শহীদ বলেন, সংযোগ হয়েছে পাঁচ মাস আগে। দিনে দুবার নিয়মিত পানি আসে। পরিবারপ্রতি মাসে ২০০ টাকা করে দিতে হয়।

ডিএসকের উপপরিচালক অখিল চন্দ্র দাস বলেন, আশির দশকে ঢাকার বস্তিতে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা পানিকে সমস্যার আকর হিসেবে দেখতে পান। সংস্থাটি বস্তিতে প্রথম সংযোগ আনে ১৯৯২ সালে। ওয়াসা প্রশ্ন তুলেছিল বিল কে পরিশোধ করবে। ডিএসকে সেই দায়িত্ব নেয়। মানুষের থেকে বিলের টাকা তুলে সংস্থাটি তা জমা দিচ্ছে। এখন ৯৯টি বস্তিতে পানির বৈধ সংযোগ আছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এরশাদনগর বস্তি। সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা এই বস্তিতে কিছু লোক ডিএসকের সহায়তায় পানির বৈধ সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না। বস্তির প্রতিটি বাড়িতে অবৈধ পানির নল আছে, সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা পানি আসে। এর জন্য পরিবারপ্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে তোলেন পানির অবৈধ ব্যবসায়ীরা। এঁরা ভেন্ডর নামে পরিচিত। বস্তির কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, ভেন্ডরদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ওয়াসার কর্মকর্তাদের সম্পর্ক আছে। এঁরাই বৈধ সংযোগ আনতে বাধা দিচ্ছেন।

ব্যথা সর্বাঙ্গে
বাড়িতে পানি নেই, পানির পাইপে ছিদ্র, পাইপ দিয়ে নোংরা পানি আসছে, পানিতে দুর্গন্ধ, পানির বিল আসছে না, বিল বেশি আসছে, মিটারের তথ্য ভুল-ঢাকা শহরে কোথাও না কোথাও রোজই এমন সমস্যার কথা শোনা যায়। গত মাসে প্রকাশিত টিআইবির গবেষণাটি ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়াসার সেবা এলাকার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণাটি উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকার ৩০টি এলাকাকে পানিসংকটপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে সূত্রাপুর, জুরাইন, মতিঝিল, চকবাজার, হাজারীবাগ, শেওড়াপাড়া, নন্দীপাড়া, জগন্নাথপুর, উত্তরা-৬, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত, মিরপুর-১১, নাখালপাড়া ও ভাষানটেক। টিআইবি বলেছে, বস্তিগুলোও সংকটপূর্ণ।

ঢাকায় ওয়াসার প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার পানির নল আছে। এর অর্ধেকের বেশি পুরোনো। কিছু নল আছে ১০০-১৫০ বছরের পুরোনো। ২০ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেছিলেন, তাঁদের পানি সুপেয়। ওয়াসার পানির উৎসে সমস্যা নেই। সমস্যা পাইপলাইনে। নল ফুটো বা ভাঙা থাকলে অথবা বাড়ির পানির ট্যাংকে ময়লা থাকলে পানি দূষিত হয়। ওয়াসা সংবাদ সম্মেলনটি করেছিল টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতিবাদে।

কাঁঠালবাগান ঢালের কাছে চারতলা একটি বাড়িতে দেড় মাস ধরে পানিতে দুর্গন্ধ। বাড়ির মালিক বলেন, তাঁর সংযোগটি বৈধ, ট্যাংক পরিষ্কার, নল ওয়াসার। তিনি ওয়াসার কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। লাভ হয় না।
ওয়াসালিংক ১৬১৬২ নম্বরে ফোন করে মানুষ ওয়াসাকে অভিযোগ জানাতে পারে।

বিবিএসের সর্বশেষ শুমারিতে আবার বস্তিবাসীর সংখ্যা অনেক কম। স্থপতি ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব মনে করেন, পরিসংখ্যানটি ভুল। তিনি  বলেন, সংখ্যা কম দেখালে তাদের অস্তিত্ব এবং পানির চাহিদাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা যায়। অথচ নগরের সব বাসিন্দার মতো তাঁরাও পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি পাওয়ার হকদার। আর সেটা সরবরাহ করতে হবে ওয়াসাকেই।

বাংলা৭১নিউজ/এলএ.এফ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com