চতুর্থ দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রায়েরবাগ, মতিঝিল, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও সদরঘাটসহ ১৩ স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, পিকেটিং, পথসভা করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে সোমবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ড) অবরোধ করে নেতাকর্মীরা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী মজলিসে শূরার সদস্য শাহজাহান খান, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, মাওলানা বাইজিদ হাসান, জামায়াত নেতা মাহফুজুর রহমান ও ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেন।
কামাল হোসাইন বলেন, সরকার জনমতকে তোয়াক্কা না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চায়। বিরোধীদলকে জেলে রেখে নির্যাতন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র মাত্র। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই তারা তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই গণবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক তফসিল প্রতিহত করা হবে।
তিনি সময় থাকতে তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় বন্ধের হুমকি দিয়ে বলেন, অন্যথায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চলছে চলবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন বন্ধ হবে না। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা ও নির্যাতন করে আমাদের স্তব্ধ করা যাবে না।
কামাল হোসাইন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার জনমতকে তোয়াক্কা না করে দেশে একনায়কতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতকে দমন করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তারা জনগণকে এতটাই ভয় পায় যে, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়ার সাহস পায় না।
তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতায় থাকার জন্য অন্যায়ভাবে বাতিল করেছে। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দলীয়ভাবে ব্যবহার করছে। পুলিশ প্রশাসনকে নগ্নভাবে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। মানুষ আজ তার ঘরেও নিরাপদ নয়। রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে দলীয় পুলিশ।
রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর কোথাও আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে আমাদের এই অবরোধ চলছে এবং চলবে।
অন্যদিকে আজ চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
মতিঝিল
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাদের মুক্তি, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে চতুর্থ দফা অবরোধের ২য় দিনে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. মু. আবদুল মান্নান নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আবু আম্মার, নুর উদ্দিন এবং ইমাম উদ্দিনসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
মতিঝিল এলাকায় সড়ক অবরোধের সমর্থনে পথসভায় ড. মু. আবদুল মান্নান বলেন, আজ গণতন্ত্রবিহীন বাংলাদেশকে উদ্ধারের জন্য আমাদের এই অবরোধ চলছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আমাদের এই অবরোধ। এই অবরোধ দেশের মেহনতি মানুষের জন্য। এই অবরোধ বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য। তাই আসুন সকলে মিলে এই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত করি।
খিলগাঁও
অন্যদিকে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় রামপুরা ডেমরা সড়ক অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালামের নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও খিলগাঁও জোনের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আমিন, মহানগরী মজলিশে শূরা সদস্য মো. শাহজাহান, আসিফ আদনান, মাওলানা মাহমুদুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখার এইচআরডি সম্পাদক তাজুল ইসলাম ফয়সাল, খিলগাঁও থানা সভাপতি নাঈমুল ইসলামসহ জামায়াত ও শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
শ্যামপুর
অবরোধের দিনে রাজধানীর ধোলাইপাড় শ্যামপুর সড়কে অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য মো. মহিউদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, ছাত্রনেতা হেলালসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
হাজারীবাগ
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুর নবী মানিকের নেতৃত্বে রাজধানীর হাজারীবাগে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য শহিদুল ইসলাম সোহেল, মুজিবুর রহমান খান, শ্রমিক নেতা সাইফুল ইসলামসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
সদরঘাট
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামরুল আহসান হাসানের নেতৃত্বে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে জামায়াত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্যসহ অবরোধে অংশগ্রহণ করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সূত্রাপুর-ওয়ারী-গেন্ডারিয়ার থানা আমীর, সেক্রেটারি, থানা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর ১৩, মিরপুর ১১, ফার্মগেট, উত্তরা, রামপুরা, মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে