ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। দেশবাসী যখন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত তখন পরিবার-পরিজন থেকে দূরে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঈদের দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটানো তো দূরে, একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়ের সুযোগটুকুও মেলেনি তাদের। ঈদকেন্দ্রিক ঢাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা দিনরাত কাজ করছেন। তাদের দায়িত্বের কাছেই যেন হার মানে ঈদের খুশি। তাইতো আপনজনদের ছেড়ে নগরীর পথে পথে কাটছে পুলিশ সদস্যদের ঈদ।
ঈদ উপলক্ষে দেশবাসী যখন টানা ছুটিতে তখন রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ঈদগাহ ময়দানসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেদের ঈদ আনন্দটাও যেন মলিন তাদের।
রাজধানীতে ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ‘সমন্বিত নিরাপত্তা বলয়’ গড়ে তোলা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
সোমবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ, সংসদ ভবন এলাকা, গুলশান আজাদ মসজিদসহ যেসব স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সবখানেই ছিল পুলিশের কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা ভোর থেকে টহল জোরদার করেছেন। সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেখা গেছে তাদের। একই সঙ্গে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে চলেছেন তারা।
ঈদ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। বিশেষ করে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও শনিরআখড়া বাস টার্মিনালসহ শহরের প্রবেশ ও বাহিরমুখের সড়কগুলোতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোথাও সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, ঈদের আগে রাজধানী থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় শহরের বেশ কিছু এলাকা ও বাসাবাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। এসময় চুরি, ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকেও সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের ঈদ মানে আরও বেশি দায়িত্ব পালন। সবাই যখন আনন্দ করে তখন তাদের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের ঈদ।’
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে তো আর ঈদ করতে পারলাম না। তাই দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ঈদের জামাতে অংশ নিয়ে নামাজ শেষ করে আবার ডিউটি করছি। আমরা চেষ্টা করি সবাই যেন নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারে।’
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্য এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘শুধু ঈদ নয়, যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ যখন উৎসব আনন্দে ব্যস্ত তখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। তেমনই আমাদের ঈদ মানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
সড়কে দায়িত্বরত অন্য এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘পরিবার ফেলে রাস্তাতেই ঈদ কাটছে। কাজের ফাঁকে নামাজে অংশ নিয়ে আবারও কাজে ফেরাই আমাদের ঈদ।’
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারলাম না। সকালে বাড়ির সবার সঙ্গে ফোনকলে কথা বলেছি। ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এখন দায়িত্ব পালন করছি। এভাবেই ঈদ কেটে যাবে আমাদের।’
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, নগরবাসী যেন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। রাজধানীতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং নাশকতার গুঞ্জন বিষয়ে গতকাল রোববার এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গুঞ্জন সব সময় গুঞ্জনই থাকে। আমাদের নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই। নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই। যদি কোনো ধরনের সংবাদ আপনারা (সাংবাদিকরা) পান, তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের নিয়ে সেটি প্রতিহত করবো।’
এর একদিন আগে গত শনিবার এ উপদেষ্টা বলেন, ঈদে সবাই ছুটি ভোগ করছে। পুলিশ, বিজিবি, আনসার কিন্তু তা করছে না। তারা ঢাকার সব বাসাবাড়ি নিরাপদ রাখতে এবং নিশ্চিদ্রভাবে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ