বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ঢাকার মিরপুর রোডে কল্যাণপুর এলাকা।
সকালের ব্যস্ত রাস্তায় ঝাঁকে-ঝাঁকে মোটরসাইকেল রাস্তা কিংবা ফুটপাত দিয়ে এঁকে-বেঁকে এগিয়ে যাচ্ছে।
দুর থেকে দেখা গেল একজন মোটরসাইকেল আরোহী এবং একজন মাইক্রোবাস চালকের মধ্যে ঝগড়া চলছে।
কেন এই ঝগড়া? এগিয়ে জিজ্ঞেস করতেই মাইক্রোবাস চালক মো: সিরাজ তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন মোটরসাইকেল আরোহীর বিরুদ্ধে। ততক্ষণে মোটর সাইকেল আরোহী চলে গেছেন।
মি: সিরাজ বলেন, ” কিচ্ছু বুঝে না। হের (মোটর সাইকেল আরোহী) কথা অইলো হের আগে যাইতে অইবো। রং সাইড দিয়া ঢুইকা বলে যে আমরা আগে যাইয়া লই।”
বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশ বেড়েছে।
এ বাহনটি দিনে-দিনে যেমন জনপ্রিয় হচ্ছে, তেমনি মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগও জোরালো হচ্ছে।
একই সাথে মোটরসাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও ভারী হচ্ছে।
বিপদজনক বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের পরিচিতি থাকলে ঢাকার মতো শহরগুলোতে চলাচলের জন্য অনেকেই এটিকে বেছে নিচ্ছেন।
মোটরসাইকেলের যখন এমনিতেই বাড়ছে, তখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে মোবাইল অ্যাপ-ভিত্তিক মোটরসাইকেল পরিবহন সেবা।
এ সেবা আসার পরেও অনেকে নতুন করে মোটরসাইকেল কিনেছেন বাড়তি লাভের আশায়।
তীব্র যানজটের ঢাকা শহরে দ্রুত গতিতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার জন্য মোটরসাইেকেলের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন আরোহীরা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক শামসুল আলম বলছেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন।
চার চাকার বাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ গুণ বেশি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক শামসুল আলম।
মানুষ নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ বাহনটির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে বলে অধ্যাপক আলম মনে করেন।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ পেলেই বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো কিংবা ফুটপাতের উপর দিয়ে মোটরসাইেকেল চালানো একটি নিত্য-নৈমত্যিক ঘটনা।
পথচারীদের অভিযোগ অনেক মোটরসাইকেল আরোহী ফুটপাতের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালানো তাদের অধিকার বলে মনে করে।
তাছাড়া রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষার ধৈর্যও তাদের থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতির জন্য মোটরসাইকেল আরোহী ফরহাদ হোসেন দায়ী করলেন অন্য বাহনকে।
মি: হোসেন বলেন, ” আমাদের জন্য রাস্তার বাম পাশে কয়েক ফুট জায়গা ছেড়ে দিক। তাহলে তো আমরা যেতে পারি। কিন্তু বাস কিংবা প্রাইভেট কারগুলো সে সুযোগ দিতে চায় না”
মোটরসাইকেল যাতে ফুটপাতের উপর দিয়ে চলতে না পারে সেজন্য ২০১২ সালে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ফুটপাতের উপর যাতে মোটরসাইকেল উঠতে না পারে সেজন্য স্টিলের পাইপ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক শামসুল আলম বলছেন, তীব্র যানজটের কারণে সাবাই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যাকুল।
যানজট সমস্যার সমাধান না হলে এ প্রবণতা ঠেকানো বেশ মুশকিল বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলম।
পুলিশ বলছে, বেপরোয়া কিংবা ফুটপাতে মোটরবাইক চালানোর বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা করা হচ্ছে।
কিন্তু আরোহীদের সচেতনতা এবং মানসিকতা না বদলালে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা মুশকিল বলে মনে করছে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস