বাংলা৭১নিউজ, বি এম হান্নান, চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর উপজেলার জনপদ মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নৌ-পরিবহন ও ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২১ মার্চ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব(টিএ) মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও ১ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব মো. গোলাম মাওলা স্বাক্ষরিত পত্রে বৃহৎ জনস্বার্থে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলন বন্ধ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, কল্যানপুর, বিষ্ণুপুর ও মতলব উত্তর উপজেলার জহিরাবাদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মেঘনার নদী থেকে একদল ভূমিদস্যু ড্রেজার দিয়ে গত ৭/৮ মাস যাবত অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে আসছে। বিশেষ করে চাঁদপুর সদর রাজরাজেশ্বর ইউপির লগ্গিমারা, লক্ষ্মীর চর ও মিয়ারচর, কল্যানপুর ইউপির সফরমালি, দাসাদী, বিষ্ণুপুর ইউপির মনোহরখাদি এবং মতলব উত্তর উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নের শত শত একর আবাদি জমির ফসল ও ভুমি রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্থরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি ও ভূমি রক্ষায় প্রদক্ষেপ গ্রহন করেনি কেউ।
চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী জনস্বার্থে দুটি উপজেলার জনপদ মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলন বন্ধে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে পত্র দেন। তারই আলোকে উল্লেখিত দুটি মন্ত্রণালয় চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পত্রে চাঁদপুরের দুটি উপজেলার মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলনকারী ৩৩টি ড্রেজারের নামও প্রকাশ করেছেন। ড্রেজারগুলো হচ্ছে ঃ ভোরের আলো-১, ইনশাল্লাহ, মায়ের স্মৃতি, আল্লাহ মালিক, নবীজির দোয়া, আল মঈন ভান্ডারি-৩, সাজ্জাদ ড্রেজিং, সেন্ট কিং, জিদনান-৫, খাজা আজমেরী, দিহান এন্ড প্লাবন, মুমু সুর্বনা, রংধনু, মা ড্রেজিং-১, আল্লাহর দান মোহনপুর, কলাপাতা, ভাই ভাই ড্রেজিং, কাশফুল ড্রেজিং, মক্কা মদিনা-১, কাউছার ড্রেজিং, আল্লাহর দান মেঘনা, উম্মে হাফছা ড্রেজিং-৩, আল ফাতেহা শরীফ, জিদনান-৩, জিদনান-৬, চাঁদের আলো, মক্কা মদিনা-৭, মদিনার আলো-৭, মদিনার আলো-৪, মদিনার আলো-২, মদিনার আলো-৬, মদিনার আলো-৯ ও মদিনার আলো-৩।
‘ড্রেজার দানবের হাত থেকে রাজরাজেশ্বর রক্ষা করো’এ শ্লোগানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে চাঁদপুর সদর নদী সিকিস্তি রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নবাসী। গত ৫ মার্চ সকালে ইউনিয়নের লক্ষ্মীর চর এলাকার কয়েক শতাধিক কৃষক, শ্রমিক, জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। এসময় তারা ‘ড্রেজার দানবের হাত থেকে, রাজরাজেশ্বর রক্ষা করো’ আমার মাটি আমার জমি রক্ষা করো রক্ষা করোসহ বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। এ সংবাদ দৈনিক ইনকিলাবে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানায়, নদীর তীরে ড্রেজার দ্বারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে বসতঘর, ফসলি জমি ও স্কুল মাদ্রাসাসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ হুমকির মুখে রয়েছে। তাই অবিলম্বে এ ড্রেজার দানবের হাত থেকে ইউনিয়নবাসীকে রক্ষায় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাসন্দা নাসিমা বেগম, রেনু বেগম, কুলসুমা বেগম জানায়, আমরা নদীর পাড়ে বসবাস করি এবং নদীর পাড়ের জমিতে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করছি। গত ৭/৮ মাস যাবত ড্রেজার দিয়ে নদীর পাড় থেকে বালু কেটে নেয়ায় নদী দিনে দিনে বড় হচ্ছে। আমাদের বহু ঘর-বাড়ি আর ফসলের জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। কৃষক সোবাহান, সোহেল, বাজারের দোকানী আলম বকাউল ও জেলে মো. কামাল, ইসমাইল গাজী জানায়, প্রায় অর্ধশত ড্রেজার নদীর তীর থেকে বালু কেটে নিচ্ছে। দিনের বেলায় ড্রেজারগুলো নদীর মাঝখানে অবস্থা করে আর সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত সেগুলো নদী তীরে এসে উৎসব করে বালু কেটে নিয়ে যায়। একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সরকারি অনেক স্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের বসতভিটা ও জমিজমা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানান, এসিল্যান্ড ও নৌ-পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলনকারীদের চিহিৃত করার জন্য। সশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সহসাই কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মো. মাসুদ হোসেন জানান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পত্র এখনো আমার হস্তগত হয়নি, তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলন বন্ধ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ দেয়ার পর গত ৩ মাসে কতোটুকু অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান জানান, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু/মাটি উত্তোলন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস