বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সিরিয়ায় আসাদপন্থিদের ‘অতর্কিত হামলায়’ ১৪ নিরাপত্তা সদস্য নিহত ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আট-নয় তলার নথিপত্র সব পুড়ে গেছে বলে ধারণা ফায়ার ডিজির পঞ্চগড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ ভারতের মহারাষ্ট্রে ১৭ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে ভেতরে প্রবেশ করছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লামায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ড. ইউনূসের নিন্দা আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি : ফায়ারের ডিজি সচিবালয়ের আগুন ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সড়কে পড়ে আছে ফায়ারকর্মী নয়নের হেলমেট ও তাজা রক্ত সচিবালয়ে আগুন: যে হুঁশিয়ারি দিলেন আসিফ মাহমুদ আগুন ৬ তলায় লেগে উপরে গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবাই একসঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা’ বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন সৌদিতে সড়কে প্রাণ গেল ময়মনসিংহের দুই যুবকের, পরিবারে শোকের মাতম

ডিবি কর্তৃক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন জবির সমন্বয়ক

জবি সংবাদদাতা:
  • আপলোড সময় শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

‘যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, তখন ভেবেছিলাম- গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না। কিন্তু এর চেয়েও পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে, তা আমার কল্পনায় ছিল না!’

এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার সমন্বয়ক নূর নবী। জামিনে মুক্ত হয়ে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে ডিবি ও কারাগারের নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় দফা দাবি নিয়ে এসেছিলাম। এডিসি বদরুল আমাকে ডেকে আলাদা করেন। ডিবির পাঁচটা গাড়ি এসেছিল। তারা শুধু আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। গাড়িতে উঠিয়েই আমাকে মার শুরু করে। যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’

নূর নবী বলেন, ‘ডিবিতে নেওয়ার পর আমাকে প্রস্রাব করতে বলে। প্রস্রাব করতেই বৈদ্যুতিক শক খেয়েছি আমি। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে আমি পড়ে গেছি। হাতে একটা ইনজেকশন দিয়েছে আমার। ওরা আমার অণ্ডকোষে জোরে জোরে আঘাত করেছে।

বারবার আমার মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাচ্ছি না কেন! তারা বারবার আমার কাছে সমন্বয়কদের নাম জানতে চাচ্ছিল। তারা আমার কাছ থেকে বিএনসিসির কার্ড পায়। পরে নিজেদের মধ্যে বলে, “সে এত শক্ত কেন? এ জঙ্গি, জঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে।” আমি এটা বলতে পারিনি যে- আমি সেনা মহড়ায় অংশ নিয়েছি, আমি অন্তত জঙ্গি হতে পারি না।’

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে নূর নবী আরও বলেন, ‘তারা আমাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে একটি চেয়ারে বসিয়ে আমার সব কাপড়চোপড় খুলে ফেলে। সেই চেয়ারে বসিয়ে গালি দিচ্ছিল। তখন পাশের অন্যদের কথা শুনে বুঝতে পারি, ডিসি আসছেন। তিনি আমাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিচে চিৎ করে শুইয়ে আমাকে বলেন, “তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেব।” রুটি যেভাবে বেলে, ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়।

আমাকে কান্না করতে পর্যন্ত দেয়নি। আমি ভাবছিলাম যে এরা মানুষ না। মেরে মেরে আমাকে বারবার বলছিল, “তোর তথ্য আমরা অনেক দিন শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির।” ভেবেছিলাম আমার পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে!’

নূর নবী বলেন, ‘ওরা আমাকে ১৫ তারিখ (জুলাই) থেকে ট্র্যাক করছিল। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে ১৭ তারিখ বিদায় নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকেলে ফোন দেব। এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে মেরেছে। আমার হাত ভেঙে গেছিল। হাড় ভেঙে টুকরা–টুকরা হয়ে গিয়েছিল। কোনো রকম এক্স–রে ছাড়াই খুব বাজেভাবে অপারেশন করা হয়েছিল। উলঙ্গ অবস্থায় আমাকে ডিবির রুমে নেওয়া হয়েছে, আমার চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪টায় (বিকেল) ডিবির হারুন আসেন।

এসে বলেন, “একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন? একে ক্রসফায়ার দে।” এরপর ডিবির লালবাগ শাখা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার দুই হাঁটু পিটিয়ে ওরা ভেঙে ফেলে। ওই হাঁটুর ওপর তারা আমাকে বসায়ে রাখে। আমি ভাবছি আমাকে মেরেই ফেলবে। তারা আমার মাথায় বন্দুক তাক করে বলে, “একে মেরেই ফেলব। বাংলাদেশের যত সমস্যার মূল এই ছাত্ররা। এরা শিবির, এরা সাধারণ ছাত্রদের উসকে দিয়েছে।” আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমাকে মেরেই ফেলবে।’

কারাগারে নির্মম অত্যাচারের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কারাগারে আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছিলাম, আমাকে হাসপাতালে নেন। আমাকে নেয়নি। আমি এক প্যান্টে আটদিন ছিলাম। আমাকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমাকে আমদানিতে (কারাগারের আমদানি কক্ষ) পাঠায় দিছে। আমি একদিক হয়েও শুয়ে থাকতে পারতাম না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার, পারি নাই। শেষে ২৭ তারিখে আমাকে এমসিতে নেওয়া হয়। ডাক্তার দেখে বলে ওকে ইমার্জেন্সি হাসপাতালে নিতে হবে। ঢাকা মেডিকেল বা পঙ্গুতে রেফার করে। তবুও আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে যখন অন্য ছাত্ররা জানতে পারে, আমি সমন্বয়ক। তখন তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমি একটু সাহস পাই। পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো, যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি। স্যারেরা যখন দেখা করতে আসেন, তখন আমাকে এক পর্যায়ে বলা হয়, আমাকে টাওয়ারে আলাদা একঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তখন আমি সবাইকে আমার কাছে আসতে বারণ করি। আমি নিজেকে একঘরে করে রাখি।’

সাজানো মামলা দেওয়ার ঘটনা বর্ণনায় নূর নবী বলেন, ‘তারা আমাকে বলে, “তোকে ক্রসফায়ার দেব। তুই রেডি হয়ে নে।” আমরা ছয়জন ছিলাম মোট। রমনায় নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেওয়া হলো। আমার হাতে পেট্রলবোমা ধরায়ে দিল।

ভিডিও করা শুরু করল। তারা যে মামলা সাজাবে আমি ভাবতেও পারিনি। দেশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এমন পর্যায়ে যাবে, ভাবিনি। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ দেশের মানুষের আস্থার জায়গা হওয়া উচিত ছিল। যা–ই হোক, তারা আমাকে মেরে ফেলেনি। আমি বেঁচে ফিরেছি। স্বাধীন দেশে আবার ফিরতে পেরেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।’

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com