অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন লিগ্যাল ফোরামের (এডিএলএফ) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নজরদারি আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (সোমবার) ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলামটরে এ আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় আইন বিশেষজ্ঞ, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ডিজিটাল নজরদারির ফলে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় সংঠনের সদস্য নফিউল আলম সুপ্ত, আবিদ আনসারী, ইশতিয়াক আহমেদ জিপু, সুমাইয়া শাহরিয়ার ফিদাসহ অনেকেই বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী সর্বব্যাপী নজরদারির সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। তিনি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কাঠামোর ওপর এর প্রভাব তুলে ধরে ব্যাখ্যা করেন যে, নজরদারি ও মানবাধিকার মূলত পরস্পরবিরোধী এবং একসাথে সহাবস্থান করতে পারে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং পলিসি স্কলার সাবহানাজ রাশিদ দিয়া ঔপনিবেশিক যুগের নজরদারি আইন পর্যালোচনা করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়ায়, বিশেষ করে ২০০১ সালের পর, আধুনিক নজরদারি আইন প্রণীত হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নজরদারির সামাজিক প্রভাব পুরোপুরি বুঝতে হলে, ভূরাজনৈতিক ও অন্যান্য বৈশ্বিক কারণগুলোকেও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশের প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার দেশের আইনগত কাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেন, যা নজরদারির অপব্যবহার রোধে সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, শারীরিক নজরদারি সভ্যতার শুরু থেকেই ছিল, তবে বর্তমান যুগে সাইবার নজরদারি সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি আইনগত নজরদারির জন্য কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা চালু করা এবং নজরদারির প্রয়োজন ও অধিকার রক্ষার মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান ‘যৌক্তিক বিধিনিষেধ’ নীতির বিচারিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ‘যৌক্তিক বিধিনিষেধের’ দোহাই দিয়ে পরিচালিত অনিয়ন্ত্রিত নজরদারি কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনি শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
পুরো আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং এডিএলএফের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মনির হোসেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ