বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে একটি বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু এই সামিটের দিকে কেন সবার নজর?
রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ সেই সম্পর্ক আরো খারাপ করে তুলেছে।
পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা যাক:
এজন্য ফিরে যেতে হবে তথাকথিত স্নায়ুযুদ্ধের (১৯৪৫-১৯৮৯) সময়কালে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনো যুদ্ধে জড়ায়নি, তবে ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরেও তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়ে গেছে।
বর্তমানে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবার রাশিয়াকে সেই ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চান। কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানও নিচ্ছে দেশটি।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার পর সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কয়েকটি দেশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের পর এই দুই নেতার সম্পর্কের বিষয়টি বিশ্বে সবার নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যদিও ওই হস্তক্ষেপের অভিযোগ নাকচ করেছে মস্কো।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে, মি. ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়া ওই নির্বাচন প্রভাবিত করেছে।
নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল কিনা এবং মি. ট্রাম্পের শিবির তাতে কোন সহায়তা করেছে কিনা, সেটি নিয়ে তদন্ত করছেন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, নির্বাচনে হারার কারণে এটি ডেমোক্রেটদের একটি ষড়যন্ত্র।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রচলিত রিপাবলিকান নীতির অনেকটা প্রতিকূলে দাড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আকাঙ্ক্ষার কথা জানান।
গত সপ্তাহেই তিনি শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট, জি সেভেন গ্রুপে রাশিয়াকে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সমর্থন দেন। ক্রাইমিয়াকে সংযুক্ত করার পর ওই গ্রুপে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল।
ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে তিনি বলেছেন, ‘তিনি খুব ভালো নেতা।’ গত বছর তিনি মি. পুতিনকে বলেছেন ‘টাফ কুকি।’
গত মার্চে রাশিয়ার বিতর্কিত নির্বাচনে মি. পুতিনের জয়ে মি. ট্রাম্প অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, যদিও তার উপদেষ্টারা তা না করার জন্যই পরামর্শ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘খুবই উজ্জ্বল একজন ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমান এবং বহুমাত্রিক বলে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
দুই নেতার আলোচনার বিষয়ের মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেন আর সিরিয়ার যুদ্ধের বিষয়।
গত সপ্তাহেই নেটো দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্মেলনে রাশিয়ার আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করেন। এখন কি তিনি সেই উদ্বেগের কথা মি. পুতিনকে সরাসরি জানাবেন?
ইউরোপীয় মিত্ররা বলছেন, তাদের জানানো হয়নি যে হেলসিংকি বৈঠক থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কি অর্জন করতে চাইছেন।
এটা বলা আসলেই কঠিন। এই বৈঠকের ব্যাপারে আগাম ভবিষ্যৎ বাণী করা সম্ভব নয়, তবে মার্কিন উপদেষ্টারা আভাস দিয়েছেন, এখান থেকে বড় কোন ঘোষণা আসার সম্ভাবনা নেই।
আরো রহস্য তৈরি হয়েছে যে, দুই নেতা একবার একান্ত বৈঠকে মিলিত হবেন, যেখানে শুধুমাত্র তাদের অনুবাদকরা উপস্থিত থাকবে।
তবে অনুমান করা যেতে পারে, দুই দেশ হয়তো আবার আগের মতো কূটনৈতিক উপস্থিতি গড়ে তোলার বিষয়ে সম্মত হতে পারেন। যুক্তরাজ্যে সাবেক রাশিয়ান গুপ্তচরের ওপর নার্ভ গ্যাস হামলার ঘটনার পর থেকে সম্প্রতি তাদের মধ্যে কূটনীতিক বহিষ্কারের ‘ইটের বদলে পাটকেল’ নীতি চলছিল।
অনেক অর্থই বহন করছে। সিরিয়া, ইউক্রেন, ক্রাইমিয়াসহ বিশ্বের অনেক জটিল বিষয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া-যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বেই।
রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ সারা বিশ্বের জন্যই ক্ষতিকর বলে মি. পুতিন বর্ণনা করেছেন।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষ ভাবে এই বৈঠকের ওপর নজর রাখবে। রাশিয়ার হুমকির কারণে তারা কিছুটা অস্বত্বি মধ্যে রয়েছে, আবার অনেক দেশ তাদের জ্বালানির জন্য রাশিয়ারও ওপরও নির্ভরশীল।
মধ্য আর পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের যে বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম-২ নামের প্রকল্প নিয়েছে জার্মানি, তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই রুটে ইউক্রেন, পোল্যান্ড বা বাল্টিক দেশগুলো থাকবে না। ফলে এসব দেশও এই বৈঠকের দিকে নজর রাখবে।
সুতরাং সবমিলিয়ে সারা বিশ্বেরই নজর থাকবে, সোমবারের এই বৈঠকে আসলে কি হতে যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস