মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মেট্রোরেল লাইনের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ গাজায় তীব্র শীতে মারা যাচ্ছে একের পর এক শিশু টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো শাকিব খানের ঢাকা জিমি কার্টার ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু : প্রধান উপদেষ্টা ঈশ্বরদীর সাবেক মেয়র ঢাকায় গ্রেপ্তার পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর হলেন তারিক, ৮ এসপিকে বদলি তারুণ্যের উৎসবের উদ্বোধনী খামে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে তিন অভিবাসীর মৃত্যু মঙ্গলবার ব্যাংক হলি ডে, লেনদেন বন্ধ রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিয়া পরিষদের ফুলেল শুভেচ্ছা বাণিজ্য মেলা শুরু বুধবার, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে মঙ্গলবার সীমান্তের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত পাকিস্তানের পাঞ্জাবে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ঝড়, বড় স্কোর তাড়া করে শুভ সূচনা বরিশালের সাবেক আইজিপি মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ কৃষক বিদ্রোহে অচল পাঞ্জাব, ২০০ ট্রেন বাতিল মামলা বাণিজ্য শুরু হয়েছে: আসিফ নজরুল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মাইকেল চাকমার অভিযোগ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা

ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছেন বিদেশিরা

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি: গবেষক শাহরিয়ার রহমান সিজার ও বনবিভাগের এক কর্মকর্তার রহস্যজনক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনের তোয়াক্কা না করে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে নানা বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করছেন দুই বিদেশি নাগরিক। সেইসঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং বন্যপ্রাণীর নমুনা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে।

বনবিভাগের অনুমতি না নিয়েই ২ বিদেশি ও শাহারিয়ার সিজারসহ ৩ জন মিলে বিপন্নপ্রায় বনরুইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেছেন গত ঈদের সময়। যদিও এ খবরের অনুসন্ধানের কথা জানতে পেরে প্রভাব খাটিয়ে গত ২৬ জুন বনবিভাগ থেকে তড়িঘড়ি করে অনুমতি নিয়েছেন সিজার।

তবে এই অনুমতিতে সিজার কাজ করতে পারলেও বিদেশিরা কোনোভাবেই কাজ করতে পারেন না। বন আইন অনুযায়ী যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ছিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া উদ্যান। সেসময় পর্যটক হিসেবে ঘুরতে আসা দুই মার্কিন গবেষক স্কট ট্রাগেসার ও এলেক্স উইলস লাউয়াছড়া বনে ঢুকে নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করেছেন। সেইসঙ্গে করেছেন বনরুইয়ের নমুনা সংগ্রহ। এই কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করেছেন সিজার।

লাউয়াছড়ার একজন ট্যুর গাইড নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ঈদের বন্ধে বিদেশিদের বনে দেখেছেন, ভেবেছিলেন তারা ঘুরতে এসেছেন।

অভিযোগ আছে, এই দুই মার্কিন গবেষক বনরুইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তীতে আরও সংগ্রহ করতে শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে যান। কিন্তু সেবা ফাউন্ডেশন তাদেরকে সহযোগিতা করেনি জানিয়ে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, কয়েকজন এসেছিল। তাদের সঙ্গে দুইজন বিদেশিও ছিল। তারা বনরুই হাতে নিয়ে দেখতে চাইলে আমরা তাদের হাতে দেইনি। এমনকি খাঁচা থেকেই বের করিনি।

এদিকে ঈদের সময় লাউয়াছড়া থেকে বন্যপ্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করে তা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের ল্যাবে যান এবং জিন সংগ্রহের চেষ্টা করেন।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী আকাশ বলেন, দুইজন এসেছিলেন। একজনের নাম অ্যালেক্স। অপরজন গবেষক স্কট ট্রাগেসার। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত এলাকায়ও নিয়মিত যাতায়াত করছেন তারা।

ব্র্যাকের বায়োলজি ল্যাব সূত্রে জানা যায়, সালমান নামের সেখানকার এক সাবেক কর্মচারির মাধ্যমে ল্যাবে যান স্কট ও এলেক্স। তারা দেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষায় কাজ করেন দাবি করে বনরুইয়ের জিন নিয়ে ব্র্যাকের ল্যাবে গবেষণা করতে চান। তবে ল্যাব খালি না থাকা ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় সেসময় তারা কাজ করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ল্যাব সহকারী আসমা আফজাল।

এ সময় কাজের সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে ব্র্যাক ল্যাবকে যন্ত্রপাতি কিনে দেয়ার আশ্বাসও দেন স্কট। তবে ব্র্যাক সরকারি অনুমতিপত্র চাইলে পরবর্তীতে কাগজপত্রসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবেন বলে চলে যান তারা।

বিদেশিরা শাহরিয়ার রহমান সিজারের সহযোগিতায় শুধু লাউয়াছড়া বনেই নয়, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেছেন। তবে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে তাদের যাতায়াত সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন থাকলেও তথ্য লুকানোর জন্য গত ৪ মাসের সব তথ্য কে বা কারা মুছে ফেলেছে।

jagonews

অভিযোগ আছে, এসব কাজের পেছনে এবং বিদেশিদের সহযোগিতায় রয়েছেন দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান সিজার। তবে সিজারের দাবি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কাজ করছেন তারা।

এদিকে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের দাবি, সংগঠনের অগোচরে এসব করছেন সিজার। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইবনে ইউসুফ বলেন, সিজার গত তিন মাসে সিসিএ’র নাম ব্যবহার করে যে কাজগুলো করছেন সেগুলো নিজের উদ্যোগে করছেন। গত ৩ মাস যাবত ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের (সিসিএ) সঙ্গে যুক্ত না হয়েও বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে সিসিএর কর্মকর্তা পরিচয় দিচ্ছেন, সিসিএর হয়ে মিটিং করছেন, ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন, ভাওয়াল যাচ্ছেন, প্রোজেক্ট চালাচ্ছেন।

অপরদিকে বন্যপ্রাণী গবেষক শাহরিয়ার রহমান সিজারের কাছিম সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি ছবিতে এলেক্সের সঙ্গে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা এসএম জহির উদ্দিন আকনকে দেখা গেছে। সেখানে তাকে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলেক্স তার কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেখানে গিয়েছে এবং ডকুমেন্টারি করেছে। তবে স্কট সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি তার। একইসঙ্গে স্কট ও এলেক্সের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাথা ব্যথা কেন সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, অ্যালেক্সের সঙ্গে আমি যাইনি। যখন গিয়েছিলাম তখন সিজার সেখানে ছিল। ফলে বনবিভাগের এই কর্মকর্তার দেশের আইনের প্রতি আনুগত্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশি নাগরিক স্কট বাংলাদেশে ৭ বার এসেছেন এবং প্রতিবারই ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসেছেন। আর এলেক্স এসেছেন একবার। সিজার এতদিন ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সে (সিসিএ) যুক্ত হয়ে কাজ করলেও এলেক্স এবং স্কটের কারোরই সিসিএতে কোনো পোস্ট নেই। স্কট বাংলাদেশের বনরুই নিয়ে বিদেশি একটি প্রকল্পে কাজ করার জন্য বনবিভাগের কাছে অনুমতি চাইলেও বনবিভাগ অনুমতি দেয়নি। এরপর তিনি সিজারের সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ শুরু করেন।

সিজার বর্তমানে অনুমোদন নিয়ে কাজ করলেও গত ২৬ জুনের আগে তার কোনো অনুমোদন বন বিভাগ থেকে ছিল না। অনুমোদন না পেয়েও তিনি নিজে বিভিন্ন বনে বিদেশিদের নিয়ে যান এবং বনরুইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেন। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।

এদিকে বনরুই নিয়ে কাজ করার জন্য গত ২৬ জুন তড়িঘড়ি করে শাহরিয়ার সিজারকে যে অনুমতি দেয় বন বিভাগ তার নেপথ্যে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী কাজ করছে।

প্রভাবশালীর চাপে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন অধিদফতরের বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) জাহিদুল কবির। তিনি জানান, আমরা অনুমতি দিয়েছি গত ৪/৫ দিন আগে। সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী এমপির সুপারিশ তাকে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে।

jagonews

কিন্তু এ অনুমোদন নিয়মবহির্ভূত দাবি করেন বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী গবেষণা কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষক কমিটি যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমাদের প্রধান বন সংরক্ষক অনুমোদন দিতে পারেন। এছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না।

তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের কাজ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এছাড়া তিনি স্বীকার করেন, দুইজন বিদেশি লাউয়াছড়া বনে গিয়েছিলেন। কিন্তু বনরুইয়ের নমুনা কালেকশন করতে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে গেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যাইনি তবে আমার কলিগরা যেতে পারে।

jagonews

লাউয়াছড়া বনের এক কর্মকর্তা সিজারের বিষয় নিয়ে  বলেন, সে এখন অনুমতি নিয়ে কাজ করছে। তবে আমরা সতর্ক আছি। তাকে জানিয়ে দিয়েছি যখনই সে বনে ঢুকবে অবশ্যই আমাদেরকে জানিয়ে ঢুকতে হবে।

বাংলা৭১নিউজ/এআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com