বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এছাড়া এফডিআই তেমন আসছে না। এক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো কী।
সে বিষয়ে বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্যাক্স জিডিপি বাড়ানো ও এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) আনা বড় চ্যালেঞ্জ। আবার এফডিআইয়ের জন্য রেগুলেটরি বেরিয়ারের পাশাপাশি কাস্টমস পলিসি, কেউ বলছেন উচ্চ ট্যাক্স রেট, আবার কেউ ট্যাক্স বৈষম্যের কথা বলছেন। যেমন ট্যাক্স সুবিধা কাউকে দিচ্ছি আবার কাউকে দিচ্ছি না। এটি তাদের বক্তব্য।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবশ্যই আমাদের রিসোর্সের কমতি রয়েছে। আমাদের যে রাজস্ব আয় হয়। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও কম। ট্যাক্স আদায় কম হওয়ার কারণ হচ্ছে, ট্যাক্স বেইসটা বড় না। রাজস্ব আহরণের জন্য আমরা নির্ভর করি ভ্যাটের ওপর। সেটাতে সারা বছরই তাদের উপর চাপ পড়ে। এই ভ্যাট সারা বছর আদায় হয়, বিষয়টা তেমনও না।
এছাড়া সারা বছর যে ট্যাক্স আদায় হয় তা বেশ বড় না। আবার যারা ডিরেক্ট ট্যাক্স দেন, যারা কমপ্লায়েন্স, তারা দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ লোকই ট্যাক্স দিচ্ছে না। ওইখানে আমাদের ট্যাক্স নেট বাড়ানো দরকার। এখানে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যার ফলে এবারে কিছুটা ইনকাম ট্যাক্স বেড়েছে।
যে কারণে আমাদের দেশীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর এবং বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি ঋণ আমাদের দরকার। প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের জন্য। প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের জন্য বহু টাকা পয়সা দরকার। আমাদের সেরকম টাকা-পয়সা নেই। সেজন্য আমাদের বিদেশি ঋণ প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে অনেক বিদেশি ঋণ আমাদের পাইপলাইনে আছে। যেমন বিশ্বব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ডচাটার্ড ব্যাংক, জাইকার লাইনআপে বেশ কিছু টাকা আসছে। এগুলোতে সময় লাগবে। তবে টাকার অংকটাও বেশি। কমিটমেন্টও অনেক আছে। কিন্তু ডিসবার্সমেন্ট একটু স্লো। কারণ অনেক প্রজেক্ট আমরা ৪-৫ মাস বন্ধ রেখেছিলাম। এখন কিছুটা শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আমাদের জন্য একটি বড় ইস্যু সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ক্যালকুলেশনে ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এফডিআই। রেগুলেটরি, এনবিআরের রুলস রেগুলেশন, ট্যাক্স কালেকশন, ব্যাংকগুলোর সহায়তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি এগুলোর ওপর এফডিআই নির্ভর করে।
সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে দেশের মানুষের বিনিয়োগে অবস্থার কনফিডেন্টের ওপর। দেশের মানুষ বিনিয়োগ কম করলে, বিদেশি বিনিয়োগ কম আসবে। কাজেই এই এফডিআই আনা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিডা এখানে কাজ করছে। তার জন্য কিছু পলিসিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইপিজেডও কাজ করছে। এর ফলে মোটামুটি একটা অবস্থানে এসেছে।
রিপেট্রিয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। প্রফিট নিতে পারে না। ফরেন এক্সচেঞ্জ সংকট ছিল। যারা বিনিয়োগ করে, তারা চিন্তা করে টাকা দেশে নিয়ে যেতে পারবে কী না? এগুলো ইম্প্রুভ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা রিপেট্রিয়েট আ্যালাউ করেছে। ট্যাক্স সিমপ্লিফাই করা, কাস্টমস তাড়াতাড়ি ক্লিয়ারিং করা ও পোর্টে পণ্য আটকে থাকার বিষয়গুলো আমরা ইতোমধ্যে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এছাড়া যারা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে, তাদের লোকাল ঋণের একটি বিষয় আছে, তারা স্থানীয় উৎস থেকে ঋণ নিতে চায়। এটি ডিফিকাল্ট। যতটুকু সম্ভব পলিসি সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। মোটকথা তাদের ইম্পুট সাপোর্ট, পলিসি সাপোর্ট, রেগুলেটরি সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এছাড়া জ্বালানি, গ্যাস ও পানিতে সমস্যা আছে। যদিও এফডিআইয়ের জন্য ল্যান্ডের ঝামেলা নেই ঠিকই, কিন্তু গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিতে সমস্যা আছে। মিরসরাইতে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি কোথা থেকে আসবে- সেটা একটা সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় বিডা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। সময় লাগবে। তবে এফডিআইয়ের ইনফ্লো আছে। এখানে অনেক বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ আছে। সেগুলোর কিছু কিছু সম্প্রসারণ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ