ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের পর এবার অস্থির চট্টগ্রামের চালের বাজার। বোরোর ভরা মৌসুমে অন্যান্য বছর চালের দাম কমলেও এ বছর উলটা দাম বাড়ছেই। দুদিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তা চালে (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত চাল রপ্তানি সীমিত করবে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চট্টগ্রামে পাইকাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে অসাধু ও বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার আশায় টনে টনে চাল মজুত করছেন। এ কারণে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বলতে গেলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চালের দাম বাড়ছে।
কয়েক মাস ধরে দেশে ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এই চাপে মানুষের জীবনযাত্রায় যেখানে নাভিশ্বাস উঠেছে, সেখান নতুন করে চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের এখন ত্রাহি অবস্থা। মোটা চাল ও মোটামুটি ভালো মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এ কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্ট আরেক দফা বেড়েছে। তারা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।
আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রামের কিছু বড় ব্যবসায়ী আছেন যাদের চালের মিল নেই। কিন্তু তারা প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করেন। চাল প্যাকেটজাত করার জন্য এসব ব্যবসায়ী চাল মজুত করছেন। ফলে চালের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, বেসরকারি আমদানিকারকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার আড়তদাররা আগের দরে চাল বিক্রি করছেন না। এ কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারিতে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ৩৩০০ টাকা দরে।
ঈদের পরের সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা। ওই চাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা বা এরও বেশি দরে। নূরজাহান সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২২৫০ টাকা দরে। ঈদের পরের সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ২০০০ থেকে ২০৫০ টাকা দরে।
পাইকারি বাজারে মিনিকেট আতপচাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৩১০০ থেকে ৩২০০ টাকা দরে। অথচ কয়েকদিন আগেই তা বিক্রি হয়েছিল ২৬০০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দামে। এ চালের দাম ১৫ দিন আগে ছিল বস্তা ২৩৫০ টাকা। মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা দরে। আগে বিক্রি হয়েছে ২১০০ টাকা দরে। গুটিসিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। তা বিক্রি হয়েছিল ২০০০ টাকা দরে। মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকায়। তা বিক্রি হয়েছিল ১৯০০ টাকা দরে। প্রতি বস্তা ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে চিনিগুড়া চাল।
খাতুনগঞ্জে আড়তদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। দুদিন আগে নতুন করে বস্তাপ্রতি মানভেদে সব ধরনের চাল ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। চালের বাজার এখন মিল মালিক ও বড় বড় শিল্প গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। সয়াবিন তেলের মতো এখন চালও মজুত করা হচ্ছে। এ কারণে চালের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
খাতুনগঞ্জের মনষা স্টোরের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাস বলেন, ‘চালের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। কাল কত টাকা হবে, তা আজ বলা যাচ্ছে না। বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ আছে। কিন্তু আমরা মিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সাধারণ মানুষ মোটা চাল খেয়ে বেঁচে থাকে। চিনিগুঁড়া ও সব ধরনের আতপ চালের দামও বেড়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিটুজির আওতায় বিদেশ থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সরকারি সিএসডি ও এলএসডিতে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। চাল নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ