বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সবাই একসঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা’ বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন সৌদিতে সড়কে প্রাণ গেল ময়মনসিংহের দুই যুবকের, পরিবারে শোকের মাতম বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যা: সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর কারাগারে প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণ করুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল্লাহ শফিকে পুলিশে দিল ছাত্র-জনতা বইমেলায় স্টলের জন্য আবেদন করা যাবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার নতুন সূচি প্রকাশ ভারত থেকে ২৫ হাজার টন চাল আসছে বৃহস্পতিবার আইএসও/আইইসি ২৭০০১:২০২২ সনদ অর্জন করলো পূবালী ব্যাংক কলকাতার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন পি কে হালদার নিজ দেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গা মুফতি-ওলামাদের সমাবেশ ভিডিও: কাজাখস্তানে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে নিহত অন্তত ৪০ উপকূলীয় মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে কোস্টগার্ড দেখে নিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি, বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কোথায়? ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ, স্নাতক পাসেও আবেদনের সুযোগ

জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম প্রয়াণ দিবস

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের স্মরণীয় বাঙালি ব্যক্তিত্ব, বহুভাষাবিদ, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।

তিনি ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ঢাকায় মারা যান। শহীদুল্লাহ্ হলের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার সম্মানার্থে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল।

অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন।

এই বহুভাষাবিদ ইংরেজি, লাতিন, আরবি, উর্দু, ফারসি, জার্মানি, ফরাসি, হিব্রু, গ্রিক, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, সিংহলি, সিন্ধিসহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। ১৮টি ভাষাতে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিলো তার। এই ভাষাগুলোতে তিনি অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাকে বলা হতো চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া।

শিক্ষাজীবন শুরু গ্রামের মক্তব থেকে। তিনি মীর মশাররফ হোসেনসহ বেশ কিছু লেখকের শিশুপাঠ্য বই মক্তবেই পড়েছিলেন। মক্তবের পড়া শেষ করে হাওড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হন। তখন থেকেই তার ভাষা শেখার আকাঙ্ক্ষা জন্মে। স্কুলে থাকতেই তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও উড়িয়া শিখেছিলেন। এমনকি গ্রিক ভাষাও শেখা শুরু করেছিলেন।  তার স্কুলশিক্ষক আচার্য হরিনাথ দের কাছ থেকে ভাষা শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

হাওড়ায় এন্ট্রান্স পাস শেষে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে এফ এ পাস করেন। এরপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন শুরু হয় ১৯১৫ সালে সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর নিজ এলাকায় আইন ব্যবসা শুরু করলে অল্প সময়েই ব্যাপক পরিচিতি পান এবং পরবর্তীকালে পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন শহীদুল্লাহ্‌।

১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে একটি গবেষণার কাজ করেন এবং এ সময় বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে লেখা তার কিছু প্রবন্ধ একটি জার্নালে প্রকাশিত হলে শিক্ষিত সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জিও সেগুলো দেখে মুগ্ধ হন এবং শহীদুল্লাহ্‌কে উৎসাহ দেন। এ জন্য ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থটি ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তাকেই উৎসর্গ করেন।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুতেই তিনি এখানে সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। পাশাপাশি তিনি দুই বছর আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করেছেন। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখানে শিক্ষাদানকালে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেন এবং ১৯২৫ সালেই প্রমাণ করেন যে বাংলা ভাষার উৎপত্তি গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে।

১৯২৬ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ফ্রান্সে যান এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত, বৈদিক ও প্রাকৃত ভাষার ওপর পড়াশোনা করেন এবং জার্মানির ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বছরই ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে, দেশে ফিরে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। সংস্কৃত ও বাংলা ভেঙে আলাদা আলাদা বিভাগ হলে ১৯৩৭ সালে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৪ সালে অবসর নেন।

অবসর গ্রহণের পরেই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৪৮ সালে তিনি আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হন এবং বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (ফার্সি ভাষার) খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। তা ছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে তিন বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র গবেষণামূলক গ্রন্থ ও প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৪০। তিনি ৪১টি পাঠ্যবইও লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের ওপর তার লিখিত প্রবন্ধ রয়েছে ৬০টির বেশি। ভাষাতত্ত্বের ওপর তার ৩৭টি রচনা রয়েছে। তা ছাড়া তিনি ৩টি ছোটগল্প এবং ২৯টি কবিতাও লিখেছিলেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অসামান্য কাজ করেছিলেন সেটি হলো, বাংলা একাডেমি থেকে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান বের করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা। রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, অমিয় শতক ও দীওয়ানে হাফিজসহ তার ১১টি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে। তার লিখিত বিখ্যাত তিনটি শিশুতোষ গ্রন্থ রয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও বাংলা সাহিত্যের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড) ইত্যাদি।

সারা জীবনের অসাধারণ সব কৃতিত্বের জন্য ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ পেয়েছেন অসংখ্য উপাধি, পদক ও পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ উপাধি, ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ কর্তৃক ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধি, ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স পদক’ (১৯৫৮), মরণোত্তর ‘হেলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি, ১৯৮০ সালে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদক’ উল্লেখযোগ্য।

বিবিসি বাংলার জরিপে শীর্ষ ২০ বাঙালির তালিকায় তার অবস্থান ছিলো ১৬তম। 

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com