বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় হত্যা মামলার তদন্তকাজ দু’বছরেও শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুবছরের তদন্তে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া পাঁচ ঘাতককে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
তাদের দাবি, অদ্যাবধি তাদের গ্রেফতার করা সম্ভভ না হলেও ওই পাঁচ খুনির প্রশিক্ষকসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। তারা দু’জনই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। চাঞ্জল্যকার এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের প্রায় অর্ধশত ধার্য তারিখ পার হয়েছে। প্রতিটি তারিখেই প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত সংস্থা।
আগামী ২০ মে এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে দীর্ঘ দিনেও তদন্তের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। তাদের মতে, এ মামলার বিচারের সম্ভাবনা শুধু শূন্যই নয়, মহাশূন্য।
জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহত জুলহাস মান্নানের ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, দীর্ঘ দুই বছরেও এ মামলার কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। এ রকম একটা সীমাহীন দুঃখজনক হত্যাকা-ের বিচারের দাবি নিহতের পরিবার রাখে। কিন্তু এ বিচার সুদূর পরাহত। এ বিচারের সম্ভবানা নিহতের পরিবার মনে করে শূন্য। শুধু শূন্যই নয় মহাশূন্য। এখনও পর্যন্ত বিচার পাওয়া নমুনা চোখে দেখিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা তো দূরের কথা, কোনো আনসারও মামলার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যেখানে রাষ্ট্র নিরব ভূমিকা পালন করছে, সেখানে বিচার চাইব কার কাছে? তাই বিচার চাই আল্লাহর কাছেই।
২০১৬ সালের (২৫এপ্রিল) চার থেকে পাঁচ দুর্বৃত্ত ‘জুলহাস সাহেবের পার্সেল আছে’ বলে রাজধানীর ধানমন্ডি কলাবাগানের ৩৫ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় ওইদিনই ওই থানার এসআই মোহাম্মদ শামীম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পুলিশ পরিদর্শক তাজুল ইসলাম এবং অস্ত্র মামলাটি তদন্ত করছেন সিটিটিসি পুলিশ পরিদর্শক সেন্টু মিয়া।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ওই পাঁচ খুনির প্রশিক্ষক ছিল রশীদ উন নবী। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজির উদ্দিন সামাদকে সে সরাসরি কুপিয়েছে। ওই মামলায় রশীদ উন নবী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে জুলহাস-তনয় হত্যাকা-ে অংশ নেয়া পাঁচ খুনিকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। অপর আসামি শরিফুল ইসলাম খুনিদের অস্ত্র সরবরাহসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া কিলিং মিশনে থাকা ওই পাঁচ খুনির সাংগঠনিক নামের পাশাপাশি প্রকৃত নাম-ঠিকানাও তদন্তে পাওয়া গেছে। সেগুলো নিশ্চত হয়ে খুনিদের গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কবে নাগাদ এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন একজন আসামি ধরতে পারলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। মূলত এ জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।
হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসি’র পুলিশ পরিদর্শক তাজুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় খুনিদের শনাক্ত করা গেছে। কে কে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না। এ হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)। এ মামলায় তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের জাবনবন্দিতেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কিছু তথ্য যাচাই-বাছাই এখনও শেষ হয়নি। গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ মামলায় চার্জশিট হতে পারে তা নিদিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, মামলা দুটির মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে এবিটি সদস্য রশীদ উন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু, শরিফুল ইসলাম ওরফে কেরামত ওরফে সিয়াম ওরফে শিহাব, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ও ইয়াছিন মিয়া ওরফে জাভেদ কারাগারে আছেন। অপরদিকে অস্ত্র মামলায় আসামি শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি জামিনে আছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস