বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ইয়ামুল জুমআ সপ্তাহের সেরা দিন। এ দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত বরকত ও মাগফেরাতের দিন। এ দিনের সম্মান মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক খোশখবরি প্রদান করেছেন। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে আল্লাহ্ তাআলা জুমআর দিনের সন্ধান দেননি। ইয়াহুদিরা বেছে নিয়েছে শনিবারকে, নাসারাগণ পেয়েছে রোববার। আর আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে (মুসলিম উম্মাহকে) জুমআর দিনের সন্ধান দিয়েছেন।
সুতরাং আমাদের (মুসলিম উম্মাহর ইবাদাতের) জন্য জুমআর দিন। ইয়াহুদিরা আমাদের এক দিন পর, নাসারারা দুই দিন পর। এমনিভাবে কেয়ামতের দিন তারা আমাদের পেছনে থাকবে। আমরা দুনিয়াতে এসেছি সবার পরে, কিন্তু কেয়াতের দিন থাকবো সকলের আগে। আমাদের মাঝেই কেয়ামতের দিন সকলের আগে ফায়সালা করা হবে।
>> জুমআর দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সমস্ত দিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমআর দিন।
এই দিনে আদম (আলাইহিস সালাম)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে; এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। জুমআর দিনেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (তিরমিজি)ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত মুআত্তায় এই হাদিসের কয়েকটি শব্দ বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিজী সেই বর্ণনাকেও সহিহ বলেছেন।
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সমস্ত দিবসের মধ্যে জুমআর দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে, এ দিনেই তাঁর তাওবা কবুল করা হয়েছে, এ দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং এ দিনেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।
জুমআর দিন সূর্য উদয় হওয়ার পর (দুনিয়ায়) মানুষ এবং জিন ব্যতিত প্রত্যেক প্রাণীই কিয়ামতের ভয়ে আতংকিত থাকে। জুমআর দিনে এমন একটি বরকতময় সময় আছে, যাতে মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন।
কা’ব বিন মালিক এ হাদিসের রাবি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলে, এটি কি প্রত্যেক বছরে হয়ে থাকে? হজরত আবু হুরায়রা বললেন, বরং প্রত্যেক জুমআতেই তা রয়েছে। অতঃপর কা’ব তাওরাত (কিতাব) খুলে পাঠ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসুল সত্য বলেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর আমি হজরত আব্দুল্লাহ বিন সালামের সাথে সাক্ষাৎ করে কা’বের সঙ্গে আমার বৈঠকের কথা জানালাম। তিনি বললেন, আমি সেই সময়টি সম্পর্কেও অবগত আছি।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাকে বললাম, আমাকে সেই সময়টি সম্পর্কে সংবাদ দিন। তিনি বললেন, এটি হচ্ছে জুমআর দিনের শেষ মুহূর্ত।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি করে সম্ভব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেছেন, ‘মুসলিম বান্দা তখন নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ্ তাকে তা দান করবেন।
আর জুমআর দিনের শেষ মুহূর্ত এমন একটি সময় যাতে নামাজ পড়া বৈধ নয় (আসর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়া নিষিদ্ধ)। সুতরাং উহা তো নামাজের সময় নয়।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তখন বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি, যে ব্যক্তি কোনো মজলিসে বসে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যক্তি নামাজ পড়া (নামাজের ওয়াক্ত হওয়া) পর্যন্ত নামাজেই মশগুল থাকে?
>> ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদে উল্লেখ করেন, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র হাদিসটি এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো- কি কারণে জুমআর দিনকে এই নামে নাম করণ করা হয়েছে?
তিনি বললেন, ‘জুমআর দিনে তোমাদের পিতা আদমকে তৈরির জন্য সংগৃহিত মাটিকে মানবাকৃতি প্রদান করা হয়েছে; এ দিনেই সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে; এ দিনেই হাশর হবে এবং কাফেরদেরকে পাকড়াও করা হবে। এই দিনের শেষাংশে তিনটি মুহূর্ত রয়েছে। তার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে তাতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করবে তার দোয়া কবুল করা হবে।
সর্বোপরি হাদিসের আলোচনাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, জুমআর দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনের ইবাদত বন্দেগি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনে অধিক পরিমাণে ইবাদত বন্দেগি করে ক্ষমা লাভ এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস