সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবি ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শুরা–ই–নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
সরকারের কাছে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ডসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের দায়ে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয় এবং আগামী ১০ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ২৫ জানুয়ারি দেশের সব পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বশীল আলেমদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মুফতি নাজমুল হাসান কাসেমী শনিবার (৪ জানুয়ারি) কাকরাইল মারকাজ মসজিদে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘গত ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে টঙ্গী ময়দানে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে বিচার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’’
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দাওয়াত ও তবলিগের সুন্দর দ্বীনি মেহেনতটি ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আজ বহুদিন থেকে সমস্যায় জর্জরিত-সংকটে নিপতিত। সাদ সাহেবের অনুসারীদের অজ্ঞতা, উগ্রতা, একগুঁয়েমি ও উশৃঙ্খলতার কারণে প্রশাসনের নানাবিধ উদ্যোগ স্বত্বেও এখন পর্যন্ত সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা হয়নি।
আরো বলা হয়, কয়েক বছর যাবত চলে আসা মতবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার যৌথ উদ্যোগে চলমান সংকট নিরসন ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপও দেওয়া হয়েছিল।
বিগত বছরগুলোর ন্যায় চলে আসা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি বছরেও দুই পর্বে ইজতেমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে তারিখ ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয় গত ৪ ও ৭ নভেম্বর ২০২৪ এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেজুলেশনের মাধ্যমে।
আর দুই পক্ষের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আগামী মার্চ-এপ্রিলের সময়সীমাও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সাদপন্থিরা আসন্ন মূল ইজতেমার পূর্বেই টঙ্গী মাঠে জোড় ইজতেমা করার জন্য গোঁ (জেদ) ধরে বসে।
শুরাপন্থি আলেমদের তত্ত্বাবধানে মাদ্রাসা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিচালিত মাঠে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি চলাকালীন সময়ে সাদপন্থিদের জোড় এজতেমার বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিবেশ। এহেন পরিস্থিতিতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি শুরাহার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের তারিখও নির্ধারিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সাদপন্থিদের জোড় ইজতেমা করার এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনা ও সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিলে নানা মহল থেকে বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলেমদের প্রতিনিধিদল আলোচনা করেন। সর্বশেষ সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
কিন্তু সকল আয়োজনকে ভণ্ডুল করে দিয়ে আলেম সমাজ, বৈষম্যবিরোধী নেতৃবৃন্দ ও সর্বোপরি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে ইজতেমার মাঠে এবাদতরত, দায়িত্ব পালনরত ও ঘুমন্ত তাবলিগের সাথীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তিনজন শুরায়ী নেজামের সাথী এবং নিরীহ মুসল্লিদেরকে সাদপন্থিরা নির্মমভাবে হত্যা করে।
আহত করে শতাধিক সাথী ও মুসল্লিকে। উক্ত হত্যা ও হামলাকাণ্ডে সারা দেশের আলেম ওলামা, তাবলিগের সাথী ও তৌহিদী জনতার মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে প্রশাসন ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদের সাথে তাবলিগের মুরুব্বী ও দেশের শীর্ষ আলেম প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ, আলেম ও মুরুব্বিগণ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখের সাথে আজ বলতে হচ্ছে, দেশের আলেম সমাজ ও দায়িত্বশীলগণ সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গড়িমসি ও অযথা সময়ক্ষেপণ দেখে যারপরনাই হতাশ ও ব্যথিত হয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ