বাংলা৭১নিউজ, মাহবুবরহমান সুমন, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতায় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন আবিস্কারের ফলে এক সময়ের রাজা বাদশার একমাত্র বাহন ছিল ঘোড়া । ওই সব রাজা বাদশার একমাত্র বাহন ঘোড়া তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। অতীতে দেখা গেছে যে ঘোড়া শুধুই রাজা-বাদশারাই ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে এই রাজকীয় বাহনটি এখন নি¤œ আয়ের মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওই রাজা বাদশরা ঘোড়া দিয়ে ওই সময় দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে,অতি অল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের জন্য এবং সৌখিন ভ্রমনে যাতায়তের জন্য টমটম গাড়ী টানার কাজে এবং ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় ঘোড়াকে ব্যবহার করেছিল তারা। এখনও গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ খেলার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বর্তমানে এই ঘোড়াকে ব্যবহার করে ঘোড়ার গাড়ী বানিয়ে (তৈরি করে) বিভিন্ন ধরণের মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে,গাড়ীর চালকরা মালামাল পরিবহনের জন্য যে সব ঘোড়া ব্যবহার করে থাকেন তার মধ্যে মাদা(পুরুষ)ঘোড়ার চাহিদা তাদের কাছে অনেক বেশী। একটি মাদা ঘোড়ার বাজার মূল্য ৫০-৬০ হাজার,আর মাদী(মহিলা)ঘোড়ার মূল্য ৩৫-৪৫ হাজার টাকা। মাদা ঘোড়ার শক্তি বেশী হওয়ায় ৪০-৫০ মণ মালামাল বহন করতে পারে এবং মাদী ঘোড়ারা ৩০-৪০ মণ মালামাল পরিবহন করতে পারে।
ইঞ্জিন চালিত ট্রাক,ভটভটি সহ বিভিন্ন পরিবহনে মালামাল পরিবহন খরচের তুলনায় ঘোড়ার গাড়ীতে পরিবহন খরচ অনেক কম হওয়ায় এ যানটির জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেশী।
বর্তমানে যান্ত্রীক যুগে গ্রামাঞ্চলে মাঠে মজুরী করার থেকে আয় বেশী হওয়ায় ঘোড়া গাড়ীর পেশাই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সমাজের নি¤œ শ্রেনীর পেশার মানুষদের কাছে। রাজা-বাদশার ওই ঘোড়া,কালের বিবর্তনে ও রাজ প্রথার বিলুপ্তির সাথে সাথে কদর কমে রাজার আস্থাবল থেকে এখন নি¤œ আয়ের মানুষের কাছে ভার বহনের বাহন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উপজেলার নওদাবশ গ্রামের নুরু মিয়া(৫০),নৈমুদ্দিন মিয়া(৫৬),নাগদাহ গ্রামের নুর মোহাম্মদ মিয়ার(৫৫) সাথে কথা বলে জানাগেছে,আগের দিনে দিন মজুরী করে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হত ,কিন্তু দু’বছর আগে গ্রামীন ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ঘোড়া সহ গাড়ী কিনে ভাড়া খাটতে শুরু করি। বর্তমানে আমার প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। ঘোড়ার খাবার ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। টানা দু’বছর সংসার চালিয়ে দুই বিঘা আবাদি জমি বন্ধক নিয়েছি। আমরা বর্তমানে ভালোই আছি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস