বাংলা৭১নিউজ,এম.নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: দরিদ্র মা-বাবার অভাব-অনটনের সংসারে নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও কাঁদছে সুমি আক্তার। এবছর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ঘোষিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পায় সুমি আক্তার।
জিপিএ ৫ পাওয়ার খবর শুনে সবাই হাসলেও স্বামী পরিত্যাক্তা দরিদ্র মায়ের কন্যা সুমি কাঁদছে। সুমি আগামীতে তার পড়াশোনার কি হবে তা নিয়ে অন্ধকার দেখছে সে। দরিদ্র মা তাকে আর পড়াতে পারবে না এই ভাবনায় কাঁদছে সুমি।
সুমির ভাষ্য, সামনে যে আমার কপালে কি আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। জানি না ভবিষ্যতে কি হবে। পটুয়াখালী জেলা শহরের চক্ষু হাসপাতাল রোড এলাকার বস্তিতে সুমি তার মা ও ছোট বোনকে নিয়ে কোনমতে বসবাস করে আসছে। পিতা কবির মৃধা ছিলেন দিন মজুর। সে দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়। নিরুপায় হয়ে মা খাদিজা বেগম তার মেয়ে সুমি ও ছোট মেয়ে বৈশাখীকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি লাউকাঠী গ্রাম ছেড়ে শহরের চক্ষু হাসপাতালের পিছনে বস্তিতে আশ্রয় নেয়।
মা খাদিজা বেগম অন্যের বাসায় বাসায় কাজ করে যে আয় করে তা নিয়ে কোনমতে সংসার চালায় এবং মেয়ে দুটিকে লেখাপড়া করিয়ে আসছে। এ অভাব অনটনের মধ্যে স্কুল শিক্ষকদের সহায়তায় সুমি টাউন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ লাভ করে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সুমি টাকার অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া প্রায়ই অনিশ্চিত। একটি টিনের ছাপরা ঘরে সুমির বসবাস।
একটি চৌকি, দুটি টেবিল ও হাঁড়ি-পাতিল ছাড়া ঘরের মধ্যে তেমন কিছুই নেই। বইপত্র সাজানো রয়েছে তার ঘুমানোর চৌকির ওপর। সেই ঘরের এক কোনে বসেই এতদিন পড়াশোনা করেছে সুমি। মা খাদিজা বেগম অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান।
ওই কাজের ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের চার সদস্যের সংসার। সুমির মা খাদিজা বেগম বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে সুমি বড়, বৈশাখী ছোট। বৈশাখী ফজলুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ছে। সুমি স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছে। আমরা পড়ালেখা করিনি তাই ভালো মন্দ কিছুই বুঝি না। সুমির লেখাপড়ার প্রতি খুব ঝোঁক।
কিন্তু আমি গরিব মানুষ। এতদিন স্কুলের স্যারেরা সাহায্য করেছে, তাই মেয়ে লেখাপড়া করতে পেরেছে। এখন কলেজে পড়াতে অনেক টাকা লাগবে। সে টাকা কোথায় পাব। মেয়ে পড়তে চায়। পরীক্ষার খবর শোনে সবাই আনন্দ করে আর মেয়ে সুমি ঘরে বসে বসে কাঁদে।
ওর কান্না দেখে আমারও কান্না আসে। জানি না সুমি সামনের ক্লাশে পড়তে পারবে কি না, আল্লাহ্ জানে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জিপি্িও ৫ প্রাপ্ত সুমির মা খাদিজা বেগম। অশ্রুসিক্ত নয়নে সুমি আক্তার জানায়, বাবা থেকেও নেই। মা কষ্ট করে পড়াশোনা করাইছে।
ভালো ফলাফল হয়েছে। জানি না কপালে কী আছে। ভবিষ্যতে পড়ালেখার পরিকল্পনা ও তার আগামীর স্বপ্ন নিয়ে জানতে চাইলে সুমি জানায়, পড়াশোনা করে ডাক্তার হবো। অসহায় মানুষের চিকিৎসা করবো। সেটা বুঝি আর সম্ভব হবে না। সামনের দিনগুলো আরও খারাপ। সবার সহযোগিতা নিয়ে এতদূর এসেছি। সামনে কি হবে আমার কপালে আল্লাহ ভালো জানেন।
টাউন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশুতোষ চন্দ্র ভদ্র বলেন, সুমি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও অত্যন্ত মেধাবী। তার বাবা থেকেও নেই। মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করায় আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি ও সম্পূর্ণ ফ্রি লেখাপড়া করিয়েছে।
তার সামনের পড়াশোনা নিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব খন্দকার পলাশ বলেন, মেয়েটি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। সে ফজলুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। টাউন স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুমি একই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুমি তার কষ্টের ফল পেয়েছে। আগামীতে সুমি পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য সমাজের ভাল মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস