শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

জিপিএ-৫, তবুও কপোলজুড়ে অশ্রুজল

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮
  • ৩২২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, মাদারীপুর প্রতিনিধি: চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শিবচরে একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কাকলী। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই চোখে পড়লো মা-মেয়ের কান্নার রোল। মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন তো দূরের কথা। দিনমজুর পিতা মসজিদ থেকে আনা একটি মাত্র জিলাপী তুলে দিল মেধাবী মেয়েটির হাতে।

শিবচর উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী কাকলী আক্তারের মিষ্টি কেনার সামর্থ্যহীন পরিবারটিতে জিপিএ-৫ অর্জনের কোন আনন্দ লাগেনি। কলেজ কর্ত্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিনা খরচে লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ অর্জন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির বদলে চরম হতাশায় নিমজ্জিত কাকলীর পরিবারে এখন লেখাপড়া চালানো নিয়েই শংকা।

কাকলীর বাড়ি গিয়ে এবং প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার ৫টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ন হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে। উপজেলার মধ্যে একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনধারী ওই কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার। দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটি উপজেলার পাচ্চরে একচালার একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুণ মাদবর দিনমজুর আর মা তাসলিমা বেগম সংসারী। অন্যের জমিতে বাবা দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান।

ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে জীবন সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্ত্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ করে দেন। বেতনসহ যাবতীয় খরচ ফ্রি করে দেয় কলেজ। যাতায়াতসহ বাকি খরচ চালাতে পাশের বাড়ির শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেই চালাতো নিজের খরচ। দিনমজুর বাবা খাবার জোগাতেই হিমশিম খাওয়ায় টাকার অভাবে কলেজের মাত্র ৪টি বই কিনতে পারে কাকলী। অন্যের পুরাতন বই এনে পড়তে হয়েছে তাকে। বাড়িতে বিদ্যুত না থাকায় দিনের বেলাকেই বেশি বেছে নিতো পড়ার ক্ষেত্রে। খাতা ফুড়িয়ে যাওয়ার শংকায় পড়তো বেশি লেখতো কম। ভাড়া না থাকায় অনেকদিন কলেজও বাদ দিতে হয়েছে। মা বাবা মন ভরে পরীক্ষায় সময় কোন ভাল কোন খাবার মুখে তুলে দেয়া ছিল দুঃস্বপ্ন।

কাকলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পাচ্চর ২ নং ওয়ার্ডের একচালার এক জরাজীর্ন টিনের ঘরে বসত ৫ ভাইবোনসহ পরিবারটির। প্রতিবন্ধী বাবা বাড়ি নেই, ভোরে বের হয়ে গেছে দিনমজুরির কাজে। ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে মাসহ কাকলীর লুকানোর চেষ্টা করে চাপা কান্না। এক পর্যায়ে সরল স্বীকারোক্তি অর্থাভাবে প্রস্তুতিতো দূরে থাক; এখনো চিন্তাতেই আনেনি বিশ^বিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতির কথা। মেয়ের এত ভাল ফলাফলের পরেও টাকার অভাবে মিষ্টিও কিনে খেতে পারেনি তারা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে দেখা যায় কাকলীর বাবা কাজ শেষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন; হাতে এক পিচ জিলাপী। মসজিদ থেকে দেয়া ওই জিলাপীটাই বাবা না খেয়ে এনেছে মেয়ের জন্য।

পাশের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, ‘এই পরিবেশে থেকে কাকলীর ফলাফল সত্যিই অবিশ^াস্য। এত ভাল রেজাল্ট করেও ওদের বাড়িতে আনন্দ নেই, বরং যেন শোক। ভাল জায়গায় ভর্তি তো দূরে থাক ওদের  ঢাকায় যাওয়ার ভাড়াও নেই।’

কাকলীর মা তাসলিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘কামলা দিয়ে ৭ জনের সংসার চালানোই কঠিন। রেজাল্টের পর মিষ্টিও খাওয়াতে পারি নাই মেয়েকে। দু‘বেলা পেট ভরে ভাতই জোটে না। আমাগো সামর্থ্য নাই ওরে পড়ানোর। ও নিজে কষ্ট কইরা এই পর্যন্ত আইছে।’

বাবা হারুন মাদবর বলেন, একদিন কাজ না করলে সংসারই চলে না। ও পড়ছে নিজেরডা দিয়াই। এহন ভাল জায়গায় পড়তে চায় । আমরা কেমনে কি করমু।

কাকলী আক্তার বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করেই পড়েছি। আমার খুব পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু আমার মা-বাবাতো পারে না। তাই জানি না কি আছে ভাগ্যে।’

পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন, ‘কলেজ কর্ত্তৃপক্ষ বিশেষ করে আমাদের এমপি লিটন চৌধুরী ও তার বোনের দেয়া বৃত্তির টাকা এবং কলেজের সহযোগিতায় অতি দরিদ্র কাকলীর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে। সবার সহযোগিতা পেয়ে ও নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।  ওর মতো মেধাবীদের আরো এগিয়ে যেতে  সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাকলী অদম্য মেধাবীদের মধ্যে ও সেরা। ও এই উপজেলার এবারের একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রী। কাকলী আক্তার অদম্য মেধাবী ওর পাশে আমরা শুরু থেকেই ছিলাম। সবাই ওর জন্য এগিয়ে আসলে ও অনেক এগিয়ে যাবে।’

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com