সাত বছর আগে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল থাকবে কিনা, বুধবার তা জানা যাবে। এদিন এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) ও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।
সোমবার চূড়ান্ত শুনানির পর বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
সঙ্গে ছিলেন, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল এ মান্নান, জাকির হোসেন মাসুদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই বিচারিক আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ফলে বিচারিক আদালতের রায়ে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। যে কারণে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখার আরজি জানিয়েছি। ‘
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে দুই একর জমি ইজারা নিয়ে কুনিও ঘাসের আবাদ করেছিলেন। মুন্নাফ নামের এক ব্যক্তির রিকশায় চড়ে প্রতিদিন সকালে সেই খামার দেখভাল করতে যেতেন তিনি। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সেখানে যাওয়ার পথেই তিনি খুন হোন। ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় একই কায়দায় রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যাার ওই ঘটনা সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যামেও আলোড়ন তোলে।
ওই দিনই কাউনিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর দায় স্বীকার করলেও সরকার তা নাকচ করে। প্রথম দিকে পুলিশের তদন্ত স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও পরে তাতে জঙ্গিদের যোগাযোগের তথ্য পান তদন্তকারীরা।
প্রায় নয় মাস তদন্তের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী ২০১৬ সালের ৩ জুলাই রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে জেএমবির আট জঙ্গিকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে আট আসামির নাম থাকলেও তাদের দুজন আগেই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হোন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কুনিও হোশিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি করেন জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা। মোটরসাইকেলে তারা তিনজন ছিলেন। গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে তারা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৬৬ বছর বয়সী কুনিও।
হাকিম আদালত থেকে মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তরের পর ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারক অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করেন। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাক্ষ্যিগ্রহণ শুরুর পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের ৫৭ জনের মধ্যো ৫৫ জনের সাক্ষ্য শোনে। পরে ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ নরেশচন্দ্র সরকার।
রায়ে জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী, ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ইছাহাক আলী, লিটন মিয়া ওরফে রফিক, সাখাওয়াত হোসেন ও পলাতক আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লবকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই পাঁচজনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক। এ রায়ের এক সপ্তাহের মাথায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে। অন্যদিকে আসামিরাও খালাস চেয়ে আপিল করেন। সে সবের শুনানির পর রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করলেন উচ্চ আদালত।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ