দিনে দিনে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে মেঘ-পাহাড়ের দেশ সাজেক ভ্যালি। আকাশ ও পাহাড়ের মিতালী আর প্রকৃতির অনন্যভূমি সাজেক ভ্যালিকে নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের যেন কমতি নেই। সুযোগ পেলেই ইট-পাথরের শহর ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে পর্যটকরা ছুটে আসেন পাহাড়ি এ অরণ্যভূমিতে।
বিভিন্ন বাহনের বাইরে সাজেক ভ্রমণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভ্রমণের জন্য বাইক অনেকের কাছে বেশ পছন্দের একটি বাহন। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মোটরসাইকেলে চেপে প্রতিদিনিই সাজেক ভ্রমণ করছেন এক শ্রেণির পর্যটকরা। ছোট ছোট গ্রুপে মোটরসাইকেল নিয়ে সাজেক ভ্রমণ করে বিভিন্ন বাইকার গ্রুপ। আবার অনেকে নিজেদের মতো করেও বাইক চেপে সাজেক ভ্রমণ করেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, যশোর, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাইকাররা প্রতিদিনই ছোটেন সাজেকের পথে। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও এখন মোটরসাইকেল নিয়ে পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে সাজেক ভ্রমণ করছেন।
বেশ কয়েকটি বাইকার গ্রুপ সাজেক রাইডিংকে উৎসাহিত করে আসছে পর্যটকদের। এসব গ্রুপের বাইরেও অনেকেই নিজেদের মতো করে বাইক চেপে সাজেক ভ্রমণ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক বাইকার মোটরসাইকেলে সাজেক ভ্রমণ করে থাকেন। মোটরসাইকেলে চেপে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সাজেক ভ্রমণ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার।
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, কোণাকোণি, উঁচু-নিচু, কোথাও সরু পিচঢালা সড়কে দুঃসাহসিক এ অভিযাত্রায় প্রতিমুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও সব ভয়কে জয় করেই সবুজে মোড়ানো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সাজেকের পথে ছুটে চলে রাইডাররা।
কুমিল্লা থেকে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোরসাইকেল রাইডিং করে সাজেক ভ্রমণে আসা দিদারুল আলম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে বারইয়ারহাট হয়ে কিছুটা পথ গেলেই পাহাড়ি সড়কে প্রবেশ করতেই আকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমাদের পথ চলা শুরু। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পর সাজেকের পথে পাহাড়ের সেই উঁচুনিচু আকাবাকা জনমানবহীন এলাকা যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি সৌন্দর্যের উদাহরণ।
দেশের দক্ষিণের শহর খুলনা থেকে ৫৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাইডিং করে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এম এম সাকিবুর রহমান বলেন, অভিজ্ঞতা না থাকলে রাইড করা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। আর সেটা যদি পাহাড়ি সড়ক হয় তাহলেও তো কথা নেই।
চার বার সাজেক রাইডিং করার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সাজেক রাইডিং তুলনামূলক সহজ হলেও খুলনা থেকে সাজেক রাইডিং করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। যারা মোটরসাইকেল রাইডিং করে সাজেক ভ্রমণ করবেন তাদেরকে অবশ্যই সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই বাঘাইহাট সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে প্রয়োজনীয় রিপোর্টিং শেষ করতে হবে। কারণ সেখান থেকেই ১০টার মধ্যে সাজেকের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে পর্যটকবাহী যানবাহন। এ সময়টা মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। বাইকারদের অবশ্যই ভ্রমণের পূর্বপরিকল্পনা থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন যারা সাজেক রাইডিং করবেন সেসব বাইকারদের দামী হেলম্যাট আর সেফটি গিয়ারস ব্যবহার করতে হবে। নির্দিষ্ট স্পিডে বাইক চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেফটি ফার্স্ট। গ্রুপ ট্যুরের ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে, অন্যদের দিকে খেয়াল রেখে একসাথে বাইক চালাতে হবে।’
ফেনী থেকে সাজেক ভ্রমণে আসা বাইকার আনোয়ার, খালেদ ও শাহেদ বলেন, ভয়ঙ্কর এবং একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর রাস্তাগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উঁচুনিচু ও আকাবাকা পাহাড়ি সড়কটি অন্যতম। তাদের মতে মোটরসাইকেলে ঝুঁকি থাকলেও পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি নিজের মতো করে ভ্রমণ করা যায়।
নোয়াখালী থেকে বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে সাজেক ঘুরতে আসা পর্যটক মো. ইসমাইল হোসেন রনি বলেন, যে কেউ নিশ্চিন্তে সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। এখানে থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যা নেই। তবে যারা মোটরসাইকেলে সাজেক ভ্রমণে আসবেন তাদেরকে সাবধানে মোটরসাইকেল চালাতে হবে।
চট্টগ্রাম থেকে মোটরসাইকেল রাইড করে সাজেক ভ্রমণে এসেছেন ব্যবসায়ী অনিমেষ। তিনি বলেন, একটা জায়গায় থাকতে থাকতে যখন হাঁপিয়ে উঠি তখনই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে দূরে কোথাও মোটরসাইকেল রাইড করি। সমতলের সড়কের চেয়ে এখানে সময়টা অনেক বেশি লাগে।
উঁচু-নিচু আর আকাবাকা সড়কে ভয় লাগে কিনা এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ভয় নয়, উপভোগ করি। একজন বাইকারকে সাহসী হতে হয়। সাহসী না হলে কোনো কিছু উপভোগ করা যায় না।
পাহাড়ি সড়কে রাস্তার বাম পাশ ধরে বাইক চালানোর পরামর্শ দিয়ে বাইকার স্থানীয় ওসমান গণি বলেন, প্রতিটি মোড়ে অবশ্যই বাইকের হর্ন বাজাবেন এবং হ্যান্ড ক্লাস ছেড়ে বাইক চালাবেন। পাহড়ি সড়ক বলে ভয় না পেয়ে সাবধনতার সঙ্গে বাইক চালাতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জিকে