বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের এবং তার ভাই জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক ও রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ এবং সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি জাকির হোসেনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার চকবাজার থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত সপ্তাহেই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সবধরনের প্রস্তুতি শেষে আজ রোববার মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
তিনি জানান, মামলায় ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এতে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের এবং তার ভাই জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক ও ক্রিসেন্ট ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ এবং সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি জাকির হোসেনসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি উদ্ধারে পাঁচটি মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকা প্রথম অর্থঋণ আদালতে জনতা ব্যাংকের পক্ষে লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মামলাগুলো করেন। চারটি মামলায় প্রধান বিবাদী করা হয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে। অন্য মামলার প্রধান বিবাদী হলেন এমএ কাদেরের ছোট ভাই এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ।
মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন এমএ কাদেরের মা রেজিয়া বেগম, স্ত্রী সুলতানা বেগম মনি, কন্যা সামিয়া কাদের নদী, আব্দুল আজিজের স্ত্রী লিটুল জাহান মীরা ও লেক্সকো লিমিটেডের পরিচালক হারুন-অর-রশীদ।
এসব মামলার মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কাছে ১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯ লাখ, রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের কাছে ৯২৩ কোটি ৫৯ লাখ, ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস লিমিটেডের কাছে ৮৯৪ কোটি ৯২ লাখ, লেক্সকো লিমিটেডের কাছে ৪৪৬ কোটি ২৬ লাখ ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের কাছে ১৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জামানত থাকা বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এসব মামলা করা হয়েছে।
এদিকে, গত ৩০ জানুয়ারি ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচারের দায়ে মানিলন্ডারিং আইনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ও সরকারি ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
চকবাজার মডেল থানায় দায়ের করা ৩ মামলায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ ও ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিন মামলায় অন্য আসামিরা হলেন -ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও এমডি লিটুল জাহান (মিরা), জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি (সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন জিএম) মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি (তৎকালীন জিএম জনতা ব্যাংক লিমিটেড) ফখরুল আলম, জিএম মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম আসাদুজ্জামান, মো. ইকবাল, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. খায়রুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সাইদুজ্জাহান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
এ ঘটনায় ওই দিনই (৩০ জানুয়ারি) ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।