বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশে ঢাকার উত্তরা এলাকায় লাইফ স্কুল নামে ধর্মভিত্তিক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ এবং সাবেক অধ্যক্ষসহ ১০জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব।
র্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, আটককৃতরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করার কাজে জড়িত ছিল এবং স্কুলটিকে তারা জঙ্গি সংগ্রহের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতো। স্কুলের সাবেক এবং বর্তমান অধ্যক্ষ তথাকথিত নব্য জেএমবির তামিম সরোয়ার গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত বলেও র্যাবের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। র্যাবের এই অভিযান বা আটকের ঘটনার পর স্কুলটি বন্ধ রয়েছে।
উত্তরা এলাকার লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, বর্তমান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এবং স্কুলটির অন্যতম একজন উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান-এই তিনজনকে সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে সাদা পোশাকে একদল লোক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তাদের পরিবার অভিযোগ করেছিল।কয়েক ঘন্টা পর তারা জানতে পারেন যে, র্যাব তাদের আটক করেছে।
সোমবার বিকেলে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে উত্তরা এবং কলাবাগান এলাকায় তাদের অভিযানে লাইফ স্কুলের তিনজনসহ মোট ১০জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের কথা জানায়।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান জানিয়েছেন,আটকের মধ্যে লাইফ স্কুলের সাবেক এবং বর্তমান অধ্যক্ষ ছাড়াও একজন নারী রয়েছে।
“দশজনের মধ্যে লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম এবং বর্তমান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানই হচ্ছে মুল ব্যক্তি।যারা ধর্মভিত্তিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতো জঙ্গি তৎপরতায়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বা বাইরের লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে জঙ্গি কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতো।”
নারায়ণগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরী নিহত হয় গত অগাস্ট মাসে।এরপর গত অক্টোবরে আশুলিয়া এলাকায় এক অভিযানে নিহত হয় সারোয়ার জাহান।গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার পর সেই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তামিম এবং সারোয়ারের নাম বলা হয়েছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে।তারাই নব্য জেএমবির মুল ব্যক্তি ছিল বলেও বলা হয়েছে।
র্যাবের কর্মকর্তা কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেছেন, এখন তাদের হাতে আটক লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামই তামিম এবং সারোয়ারকে জেএমবির সাথে বা জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।আটক ১০ই একই গ্রুপের বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান আরও বলেছেন, “স্কুলটিতে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও পরীক্ষা নেয়া হতো।অভিভাবকরা তাদের লাইনের হলে বাচ্চাদের উদ্বুদ্ধ করতে সহজ হবে। সেরকম অভিভাবকদের শিশুদেরই ঐ স্কুলে ভর্তি করানো হতো।”
র্যাবের এই কর্মকর্তার বক্তব্য হচ্ছে, লাইফ স্কুলের সাবেক এবং বর্তমান অধ্যক্ষ যেহেতু জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত এবং জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য স্কুলটিকে তারা ব্যবহার করতো। ফলে স্কুলটির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবি’র দু’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম এবং তানভির কাদেরীও উত্তরার লাইফ স্কুলে যাতায়াত করতো এবং মেজর জাহিদুলের সন্তান ঐ স্কুলেই পড়ে বলেও র্যাব তথ্য পেয়েছে।
এখন জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে আটক লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামের স্ত্রী সোনিয়া ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন,তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
এই লাইফ স্কুল ২০১৩ সালে উত্তরায় একটি ভাড়া করা বাড়িতে শুরু হয়েছিল।এখন ১১০জন শিক্ষার্থী রয়েছে।ইংরেজি এবং ইসলামিক পাঠক্রমের সংমিশ্রণে এই স্কুলে এবছর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: বিবিসি