ওয়ারিশের সম্পত্তি পেতে নিজের জীবিত ছেলে ও মেয়ের মৃত্যু সনদ তুলে জায়গা নিজের নামে দলিল করে নিয়েছেন এক বাবা। প্রায় ১০ বছর পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ‘মৃত’ ওই ছেলের দায়ের করা মামলায় কারাগারে গেছেন বাবা।
ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ১১নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের নুরনগরপুর গ্রামে। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন কাগজপত্রে ‘মৃত’ সেই ছেলে প্রবাসী এমরান হোসেন জহির ওরফে ঝুটন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঝুটন জানান, তিনি তার বাবা আহাম্মদ উল্যা বেপারীর প্রথম স্ত্রী খুরশিদা বেগমের ছেলে। এই ঘরে তার আরেক বোন খাদিজা বেগম লাকি, বর্তমানে সে মৃত।
তিনি বলেন, আমার বাবা আমার মায়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে সৎ মা এবং তিন বোন রয়েছে। আমার মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমার এক ফুফু ও অন্যান্য ৪ মৃত ফুফুর ছেলেরা আমার নামে ১৬ শতাংশ ও আরেকটি দাগে ২৭ শতাংশ জায়গা আমার ও আমার বোনের নামে লিখে দেন। সেই সূত্রে ওই জায়গার মালিক আমি হই এবং অন্য একটি জায়গার মালিক আমি এবং আমার বোন হই। পরবর্তীতে জীবিকার টানে আমি প্রবাসে চলে যাই।
এই সুযোগে আমার জন্মদাতা বাবা আমাকে মৃত দেখিয়ে গত ০৮/০৮/২০১০ তারিখে আমাদের স্থানীয় ১১নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী ও সচিবের স্বাক্ষরে নিজের নামে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। একই তারিখে তিনি আমার বোন খাদিজা বেগম লাকির মৃত্যু সনদ দেখিয়ে নিজেকে একক ওয়ারিশি দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। নিজে মালিকানা দাবি করে ওই সম্পত্তি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন।
শুধু তাই নয়, তিনি তার বাবার একমাত্র সন্তান দাবি করে তথা আমার ৫ ফুফুর অস্তিত্ব অস্বীকার করে গত ২৭/১০/২০১০ তারিখে একই ইউনিয়ন পরিষদের একই চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন।
আমি প্রবাস থেকে দেড় মাস আগে দেশে ফিরে আসার পর আমার ফুফু কর্তৃক আমাকে দান করা ও আরেক ফুফু থেকে ক্রয়কৃত জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে আমার বাবা আমাকে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে কারণ জানতে গিয়ে বাবার এসব কুকর্মের কথা জানতে পারি। এলাকায় এই বিষয়ে কয়েকবার আমাদের স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমি বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) চাঁদপুর আদালতে অভিযোগ করি।
পরে আদালতের নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার রাতেই আমার বাবাকে আটক করে। পরদিন শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) পুলিশ তাকে আদালতে পাঠালে আদালত আমার বাবাকে জেল হাজতে পাঠান।
প্রবাসী ঝুটন বলেন, আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন ছেলে হয়ে বাবার বিরুদ্ধে আমি কেন মামলা করলাম? আমি ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। জন্মের পর থেকে আমি বাবার আদর স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হলেও জীবিকার টানে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে বাবার সার্বক্ষণিক দেখভাল করেছি। তাকে নিয়মিত টাকা-পয়সা দিয়েছি। এছাড়াও আমার সৎ বোনের বিয়ে এবং বাবার চোখের অপারেশরে জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু তার প্রতিদান আমার বাবা আমাকে এইভাবে দিলেন।
প্রেসক্লাব সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এমরান হোসেন জহির প্রকাশ ঝুটনের মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী মুক্তা আক্তার, ফুফাতো বোন সরলা বেগম, ফুফাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম পাটওয়ারী, দেলোয়ার হোসেন এবং স্থানীয় সোহেল ঢালী ও সামছুল আরেফিন মুকুল প্রমুখ।
বাংলা৭১নিউজ/জিকে