বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চার নেতার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং একজনের চোখে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাকে চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা করেছে বলে ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগ।
আহতরা হলেন- ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু (২৭), ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ (২৫), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য তাহমিদ তাজওয়ার শুভ্র (২৬) এবং শিহাব (২৩)।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সকালে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসিতে) চা-আড্ডা শেষে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন।
এ সময় তারা হাকিম চত্বরের কাছে পৌঁছালে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী হামলা চালায়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মেঘমল্লার ও শুভ্রকে মারতে মারতে শাহবাগ নিয়ে যায়। অন্যদিকে শিহাব ও মঈন আহমেদকে মারতে মারতে ডাস চত্বর পর্যন্ত নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, পরশুদিনের ঘটনার পরে আমরা জানতাম— ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর হামলা করবে। সেটাই দৃশ্যমান হলো আজকের হামলার মধ্য দিয়ে। সকালে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মধু দা-র প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন মেঘমল্লার ও অন্যরা। এ সময় তারা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা হয়ে হাকিম চত্বরে পৌঁছালে তাদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, মেঘমল্লারের চোখে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। এজন্য ঢামেক কর্তৃপক্ষ তাকে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। তা ছাড়া দুজনের মাথা ফেটে যায়। তারা ঢামেকেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। এমন নৃশংস হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এটা একটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উপর ক্ষুব্ধ।
তারা যে-ই কাজ করেছে সেজন্য সাংগঠনিকভাবে ক্ষমা না চাইলে আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবো না। ইতোমধ্যেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিচ্ছে— তাদেরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তারা ক্ষমা চেয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি না দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে এবং বয়কট করবে।
ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মেট্রোরেলের স্টেশন উদ্বোধনের জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাগানো ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড ভাঙার চেষ্টা করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উপর হামলা করলে অন্তত ৩০ জন আহত হয় বলে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন রাতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় এবং ভাস্কর্যের বেদি ‘ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ সম্বলিত ব্যানার লাগিয়ে দেয় যা এখনো রয়েছে। ঘটনার জেরেই আজকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বাকিদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ