বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগ নয়, আন্দোলনকারীদের নেতা রাশেদ ও নূরের গ্রুপ জড়িত বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘গুজব ছড়াবেন না’ ব্যানারে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।
সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেন, কোটা সংস্কার নামে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। তাদের দুইটি গ্রুপ এ হামলায় জড়িত। এখানে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নেই।
গত শনিবার (৩০জুন) কোটা আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রাক্কালে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। সেসময় বেদম পিটুনির শিকার আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
এর একদিন পর সোমবারও (০২জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ আবারো হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। দুই হামলায় সবমিলিয়ে অন্তত ২১ শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া আটক হয়েছেন আন্দোলনকারীদের দুই নেতাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
হামলার পরপরই অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মাদ নিজামুল ইসলাম, ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক শেখ সাগর আহম্মেদ, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পদাক রানা হামিদ, সহ-সম্পাদক জাহিদ হাসান জয়, সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্ধিত কমিটির সদস্য শেখ আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রীয়, ঢাবি ও হলশাখার নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন।
তবে মানববন্ধনে উপস্থিত ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতারা হামলায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে তাদের এই মতলব সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা আন্দোলনকারীদের দুইটি গ্রুপের মধ্যে।’
কোন দুইটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে সৈকত বলেন, ‘রাশেদ-নূরের দুইটি গ্রুপ।’
তাহলে ছাত্রলীগ কোন গ্রুপে ছিল জানতে চাইলে তিনি এর কোনও উত্তর দেননি।
মানববন্ধন করার উদ্দেশ্য কি জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কেউ কোনও ধরণের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে আসলে তা প্রতিহত করা হবে।’
এদিকে মঙ্গলবার কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে রবিবার (০১জুলাই)মিরপুর ১৪ নম্বরের ভাসানটেক বাজার এলাকার মজুমদার রোডের ১৪ নম্বর বাসা থেকে ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান খান জয়ের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার আন্দোলনকারীদের আরেক নেতা রাশেদ খান পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
গত ২৭ জুন এক ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি বারবার ছাত্রদেরকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। তার বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভযোগ রয়েছে।
সেই ভিডিওতে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে তার নাম উল্লেখ না করেই একাধিকবার প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন রাশেদ। বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে তার বাপের দেশ। সে একাই দেশের মালিক। ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা বলবে, আর আমরা কোনো কথা বলতে পারব না।’
রাশেদের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান খান জয় দাবি করেছেন, এই ভিডিও বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করা হয়েছে।
সেই ভিডিওতে রাশেদ আরও বলেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দল নই। আমাদের সাথে কিসের ষড়যন্ত্র, কিসের রাজনীতি। রাজনীতি করবেন আপনি যাদের সাথে করার, যাদের সাথে রাজনীতি করার ভালো তাদের সাথে করবেন। ছাত্র সমাজ তো রাজনীতি করতে আসেনি।’ সৌজন্যে: ঢাকাটাইমস
বাংলা৭১নিউজ/জেএস