বাংলা৭১নিউজ, কুমিল্লা: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কবে ক্যাম্পাস খুলবে তাও নিশ্চিত করে বলছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় টানা বন্ধ থাকলে সেশনজটের মুখোমুখি হতে হবে।
এই অবস্থায় সংকটের সমাধান করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ও ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজের গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের ছাত্র সাইফুল্লাহ খালিদ। এই ঘটনার পর ১ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্র রন্টি সাহা বলেন, ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমার স্নাতক ফাইনাল সেমিস্টারের আর মাত্র একটি পরীক্ষা বাকি। এই পরীক্ষাটি কবে হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন যাতে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত ক্যাম্পাস খোলার ব্যবস্থা করা হয়।’
আইসিটির মাসুদ রানা সায়েম বলেন, ‘ঘটনা যা ঘটেছে এর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার করা হোক-এটাই চাই। কিন্তু এর জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রশাসনের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যাম্পাস খুলে দেয়া।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিঠুন খান বলেন, ‘অল্প কয়েক দিন আগেই আমরা প্রায় ৫০ দিন ছুটি কাটিয়েছি। এছাড়াও সামনের সেপ্টেম্বরে ঈদুল আজহা ও পূজার বন্ধ মিলিয়ে প্রায় ২৫ দিনের মতো বন্ধ থাকবে ক্যাম্পাস। এই অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত এই ছুটি আমাদেরকে সেশনজটে পড়ারই আভাস দিচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মোশারফ বলেন, ‘আগামী ১৭ আগস্ট আমাদের সেমিস্টার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার আগমুহূর্তে আমরা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পর ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন হয়তো ঠিক সময়ে পরীক্ষাটা দিতে পারবো না। ফলে অনেক দিনের জন্যই পিছিয়ে যাবো আমরা। তাই এই অবস্থার দ্রুত অবসান হোক এটাই চাই আমরা।’
নূরজাহান তন্বী বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বুঝি না বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বেও জড়াতে চাই না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই। প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে আমাদেরকে দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়া।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৫ আগস্টের আগে ক্যাম্পাস খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। ১৫ তারিখের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘সাইফুল্লাহ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মামলা করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত কাজও চলছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে জানানো হবে।’
এদিকে সাইফুল্লাহ হত্যার মামলাটি প্রথমে পুলিশ পরে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রমে গত ২ আগস্ট ক্যাম্পাস এলাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরদিন তাদেরকে একদিনের রিমান্ড দেয় আদালত। এরপর গত ৫ আগস্ট সকালে ঢাকার রামপুরার টিভি ভবনের সামনে থেকে বিপ্লব চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। পরে তিনি নিজেই সাইফুল্লাহকে গুলি করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ‘বিপ্লব আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে মামলার অগ্রগতির জন্য অভিযুক্ত আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়িই আমরা সফল হবো।’
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস