১৯ দিনে ৮ দলের ১৫ ম্যাচের সূচি শেষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা নামছে আজ (রোববার)। তার আগে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে বিকেল ৩টায় মোকাবিলা করবে ভারত-নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া এই ম্যাচের দিকেই এখন পুরো ক্রিকেটবিশ্বের নজর। ম্যাচে দলীয় পারফরম্যান্সই ফল নির্ধারণ করে দেবে। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে দুই দলের মাঝে।
স্পিনার বনাম স্পিনার
দুবাইয়ের পিচে সাধারণত ব্যাটারদের চেয়ে বোলাররাই বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। আরও বিশেষভাবে বললে সহায়তা থাকে স্পিনারদের জন্য। ভারত-নিউজিল্যান্ড এর আগে গ্রুপপর্বেও একই মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে ৪৪ রানে ম্যাচটি জিতে ভারত। তাদের পক্ষে ৯টি উইকেট নেন স্পিনাররা। রোহিত শর্মারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে আসার আগেই স্কোয়াডে স্পিনারদের প্রাধান্য দিয়েছিল। সেই সময় খটকা লাগলেও, পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পনা ও বাস্তবতায় মিল খুঁজে পায় ক্রিকেটবিশ্ব।
প্রথম দুই ম্যাচে ভারত নেমেছিল ২ জন স্পিনার নিয়ে। পরের ম্যাচ দুটিতে যা চারে পরিণত হয়। অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে নামা বরুণ চক্রবর্তী মিলে তাদের স্পিন বিভাগ হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। চার জনই পূর্ণ ১০ ওভার বল করতে সক্ষম। মাত্র দুই ম্যাচ খেলেও বরুণ ৭ উইকেট শিকার করে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় তিনে আছেন। রহস্যময় এই স্পিনারকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় আছে কিউইরা। তাদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে তিনিই যে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন।
অন্যদিকে, ঐতিহ্যগতভাবে স্পিনে এগিয়ে না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডও এই বিভাগে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। বিশেষ করে কয়েক মাস আগে তারা ভারতের স্পিন কন্ডিশনে স্বাগতিকদের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। তেমনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পেস-স্পিনে ভারসাম্যপূর্ণ দল নিউজিল্যান্ড।
যেখানে অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত ৫ বছরে তিনি ওয়ানডেতে কিউইদের দ্বিতীয় সেরা বোলার (৪.৬৮ ইকোনমিতে ৫৫ উইকেট)। স্যান্টনার ছাড়াও কিউইদের হয়ে পূর্ণ ১০ ওভার বল করেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। প্রয়োজনে কার্যকরী হতে পারেন গ্লেন ফিলিপস-রাচিন রবীন্দ্ররাও।
হেনরির খেলা নিয়ে দোলাচল
সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাঁধে চোট পাওয়া ম্যাট হেনরির ফাইনাল খেলা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। যদিও কিউইরা তাকে পাওয়া নিয়ে আশাবাদী। তবে অনুশীলনে তিনি ছিলেন সতর্ক অবস্থায়। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ ১০ উইকেটশিকারিও এই ডানহাতি পেসার। কেবল তাই নয়, ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচটিতে তিনি একাই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।
এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও ম্যাট হেনরির আগুনে তোপেই পুড়েছিল ভারত। তার প্রথম স্পেলেই পাঁচ রানের মধ্যে লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি আউট হয়ে দলটি লড়াই থেকে একরকম ছিটকে যায়। সবমিলিয়ে আজকের ফাইনালেও ভারতের টপ অর্ডারদের সঙ্গে মূল লড়াইটা হতে পারে হেনরির। তবে বিষয়টি এখন তার থাকা-না থাকার ওপর নির্ভর। গত ৫ বছরে হেনরি কিউইদের সেরা বোলার।
ব্যাটিংয়ে নজর থাকবে রাচিন-শুভমানের দিকে
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-নিউজিল্যান্ড উভয় দলই সবদিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যাটাররাও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তবে এর মাঝে আলো কাড়তে পারেন ভারতের শুভমান গিল ও ব্ল্যাকক্যাপস ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র।
রাচিন তো অল্প সময়েল ক্যারিয়ারেই আইসিসি ইভেন্টকে নিজের বিশেষ মঞ্চে পরিণত করে ফেলেছেন। ওয়ানডেতে তার ৫ সেঞ্চুরির (৩টি ২০২৩ বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ২টি) সবকটিই আইসিসি ইভেন্টে। আবার পারিবারিক সূত্রেও নাড়িটা ভারতের হওয়ায় তাদের বিপক্ষে বাড়তি আকর্ষণ থাকে রাচিনের প্রতি।
সমবয়সী (২৫) গিল ও রাচিনের ব্যাটিংয়েও বেশ মিল আছে। ভারতীয় তারকা ওপেনার ৬০ গড়, ১০০ স্ট্রাইকরেটে ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাট করছেন। আর কিউই ওপেনারের গড় ৪৪, স্ট্রাইকরেট ১০৮। উভয় ব্যাটারই উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিয়ে ব্যাট করতে এবং রান তুলতে পছন্দ করেন। তবে ভারতীয় দলে রোহিত-কোহলি কিংবা শ্রেয়াস আইয়ারও কম যান না। কিউইদের হয়ে কেইন উইলিয়ামসন, ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসরাও আছেন দারুণ ছন্দে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএন