চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে দুটি উপজেলার ৬ ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ভারতের গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী হয়ে। উজানের ঢলে গত সপ্তাহ ধরে জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিমাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটছে নদী-তীরবর্তী মানুষের। এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। আশ্রয়ের জন্য উঁচু স্থান নির্ধারণের পাশাপাশি খাদ্য মজুতও করছেন তারা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে পানি বাড়ছে পদ্মা নদীতে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ২১ দশমিক ২৬ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে পদ্মায় পানির বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার। বর্তমানে পদ্মার পানি বিপৎসীমার মাত্র ৭৯ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন- যে হারে পানি বাড়ছে তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে প্রায় ৯২৫ পরিবার পানিবন্দি। এরমধ্যে রয়েছে আলাতুলি ইউনিয়নে ৪৬২ ও নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৪৬৩ পরিবার।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার ১১৫ পরিবার পানিবন্দি। এরমধ্যে পাঁকা ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার, উজিরপুর ইউনিয়নে ১৫ পরিবার, দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৪৫০০ পরিবার ও মনাকষা ইউনিয়নে ৩৫০ পরিবার। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৪০ পরিবার পানিবন্দি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকার বদরউদ্দীন জানান, অস্বাভাবিক হারে পদ্মায় পানি বাড়ায় বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছে মানুষ। বন্যা হলে আমরা অসহায় জীবনযাপন করি। বন্যার কারণে নদী বিশাল আকার ধারণ করে। এই বিশাল নদী পার হয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুবই দুরহ ব্যাপার হয়ে যায়।
শিবগঞ্জ উপজেলার বোগলাউড়ি এলাকার আব্দুল আওয়াল বলেন, কয়েকদিন থেকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমির সঙ্গে মানুষের বাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। নদীর কাছের গ্রামের বাড়িগুলোয় প্রায় হাঁটুপানি। এতে মানুষ খুব কষ্টে দিন পার করছে।
এদিকে মানুষের সঙ্গে সঙ্গে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে মাসকরাই, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলায় কৃষকের ১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমি ফসল তলিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায়ই তলিয়েছে ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল । সবচেয়ে বেশি তলিয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আল মনসুর শোয়াইব বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভায় বন্যা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা মোকাবেলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন বিবেচনায় দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যও মজুত রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ