শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫ নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত চলছে: ফায়ারের ডিজি উন্নয়নের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রাশিয়ার মিসাইলের আঘাতে ভূপাতিত হয় ওই বিমান শেষ দিনে ভিড় বেড়েছে, পছন্দের ফ্ল্যাট খুঁজছেন অনেকেই বিআরটিএ নির্ধারিত সিএনজি অটোরিকশার জমা ৯০০ টাকা কার্যকরের দাবি ৬ মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল থাই নারীর সঙ্গে হোটেলে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত : প্রধান উপদেষ্টা মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যসহ নিহত ২ জাহাজে ৭ খুন: বিচারের দাবিতে কর্মবিরতিতে নৌযান শ্রমিকরা পঞ্চগড়ে টানা চারদিন দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ইয়েমেনের বিমানবন্দরে হামলা, অল্পের জন্য বাঁচলেন ডব্লিউএইচও প্রধান গান পাউডার ব্যবহার হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ’ পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী পাবনায় দাঁড়িয়ে থাকা করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন শ্রমিক নিহত, আহত ৫ নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ ক্রীড়া পরিষদে অস্থায়ী অফিস ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেখানে চলবে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: প্রধান উপদেষ্টা

চলনবিলে বিলুপ্তির পথে ৪০ প্রজাতির দেশীয় মাছ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮
  • ৯৫৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্যভান্ডার শাহজাদপুরসহ চলনবিলাঞ্চলে প্রতি বছর একের পর এক দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মিঠা পানির মাছের প্রায় ২০ শতাংশ প্রজাতির মাছই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নিঃশ্চিহ্নের পথে দেশীয় ছোট ৪০টি প্রজাতির মাছ। মলা, ঢেলা, মৌছি, চ্যালা, সরপুঁটি, খসল্লা, ভূল, বৌ, ঘাইর্যা, বাঁচা, পুঁটি, বায়েম, বাতাসি, কাজলী, বাইল্যা, রাণী, পবদা, টেংরা, পোয়া, মোয়া, কাকিলা, চাঁন্দা, খলিসা, ছোট চিংড়ি, টাকি, চ্যাং, গোচি, চ্যাপিলা, ভেদা,তারা, মেনি, তিতপুঁটি, খোকসা, খরকুটি, দেশীয় জাতের শিং ও কৈ, দারকিনা, পটকা, কাশ খয়রা, টাটকিনি, লোলসা, রায়না, তেলা টাকি, তারাবাইন, শালবাইনসহ দেশীয় প্রায় ৪০ প্রজাতির ছোট মাছ ক্রমশঃ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেটিভ ন্যাচার (আইইউসিএন) এর এক সমীক্ষায় এ তখ্য বেরিয়ে এসেছে। বহুমূখী সমস্যায় উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ুসহ নানা প্রতিবন্ধকতার প্রাষাণপুরের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে উঠতে না পেরে এইসব ছোট প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক আবাসভূমি এতটাই বদলে যাচ্ছে যে টিকে থাকার মতো উপযোগী জলাভূমি সংকীর্ণ হতে হতে দেশীয় এ ৪০ প্রজাতির মাছ বর্তমানে প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে! ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেটিভ ন্যাচার (আইইউসিএন)-এর এক সমীক্ষা সূত্রে জানা গেছে,গত এক দশকে শাহজাদপুরসহ চলনবিলসহ দেশের মিঠা পানির জলাশয় থেকে দেশীয় প্রায় ২০ প্রজাতির ছোট মাছ বিলুপ্ত হয়েছে।
এছাড়াও দেশীয় প্রায় ৪০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তের পথে। তন্মদ্ধে ২৮ প্রজাতির মাছ রয়েছে বিপন্ন অবস্থায়। মহাবিপন্ন বা চরম ঝূঁকিতে রয়েছে আরও প্রায় ১২ প্রজাতির মাছ। সংগঠনের হিসাবে একসময় চলনবিলসহ গোটা দেশে ৭’শ ৩৫ প্রজাতির মাছ ছিল যার মধ্যে ৫’শ ১১ প্রজাতিই ছিল সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি। সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে মিঠাপানির মাছসহ ২’শ ৬০ প্রজাতির মাছ অচিরেই নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। চলনবিলের মৎস চাষীদের ভাষ্যমতে, ‘কোন রকমের চাষ ছাড়াই অতীতে চলনবিলে প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। বিলের সলসীমা ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে পড়ায় সেখানে মাছের পরিবর্তে ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। বহুমাত্রায় কীটনাষকের ব্যবহার ও জলসীমা সংকোচনের ফলে চলনবিল থেকে সংগৃহিত দেশীয় প্রজাতির মাছের পরিমান প্রতি বছর ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। অতীতে চলনবিল এলাকা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতি বছর মিঠা পানির মাছের মোট চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হলেও ছোট দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদনের পরিমান বহুলাংশে কমে যাওয়ায় তদস্থলে প্রতি বছর বিপুল পরিমানে ভারতীয় রূইসহ বিভিন্ন মাছ আমদানী করতে হচ্ছে।’ জানা গেছে, বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় উৎপাদিত ও সংগৃহিত মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ দেশের মোট মাছের চাহিদার একটা বৃহৎ অংশ পূরণ করলেও কালক্রমে যোগানের পরিমান ক্রমশ কমছে। পাউবো, বিইটিএস, ডিপিএসসি, ইপিসি ও ক্রান্তি এ্যাসোসিয়েট -এর এক জরিপ সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, আত্রাই, রাণীনগর, শেরপুর ও নন্দীগ্রামের মোট এলাকা ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১শ’ ৪৬ হেক্টর। তন্মদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনায় পড়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৫২ হেক্টর। সেঁচ সুবিধার আওতায় রয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭শ’ ৫১ হেক্টর জমি। চলনবিলে রয়েছে করতোয়া, বড়াল, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাই নামের বেশকিছু নদনদী। বর্ষাকালে মাছের বিচরণ ক্ষেত্র ২ লাখ ৯ হাজার ৩’শ ১৪ হেক্টর এলাকা।
মাছ সংগৃহিত হচ্ছে ৬৫হাজার ৬শ’ চোদ্দ টন। এ অঞ্চলে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার নারী পুরুষ শিশু কিশোর বসবাস করছে। এদের একটি বৃহৎ অংশ মৎস্যচাষ ও মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মৎস বিশেষজ্ঞদের মতে,‘চলনবিলসহ দেশের অন্যান্য মিঠা পানিপ্রবাহ এলাকায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংশ হওয়া এবং ছোট মাছ সংরক্ষনের যথাযথ উদ্যোগ ও কার্যক্রম না থাকায় এসব দেশীয় প্রায় ৪০টি প্রজাতির মাছ চরম ঝূঁকিতে রয়েছে। আবার পুকুরে দেশীয় প্রজাতির বড় মাছ চাষের পূর্বেই বিষ ঢেলে ছোট মাছ নিঃশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। এছাড়া লাভজনক না হওয়ায় অনেক মৎস ব্যবসায়ীরাও ছোট মাছ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে কালের আবর্তে সময়ের পরিধিতে আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মিঠাপানির দেশীয় ৪০ প্রজাতির প্রায় ছোট মাছ। দেশীয় এসব প্রজাতির ছোট মাছ পাওয়া যেতো মূলত হাওড়, বাঁওড়, খাল-বীল, পুকুর, নদী ও বিস্তৃত জলসীমাতে। এক সময় এসব ছোট মাছের প্রধান উৎস ও যোগানদাতা এলাকা ছিল দেশের মৎসভান্ডারখ্যাত সর্ববৃহত বিলাঞ্চল চলনবিলে।
চলনবিল ছাড়াও এসব প্রজাতির ছোট মাছ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেতো সুনামগঞ্জের হাওড়, ভৈরবের বিল, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক, কুমিল্লার প্লাবিত এলাকা,হাকালুকি বিল ও উত্তরাঞ্চলের নদনদী, খালবীলে। বর্তমানে এসব উৎস থেকে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ সচারচার তেমন একটা পাওয়া না যাওয়ায় একদিকে যেমন মিঠা পানির মাছের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক উপকারী প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ছোট মাছ থেকে দেশবাসী বঞ্চিত হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগজনক! বিশেষজ্ঞ মহলের মতে,‘মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারনসহ প্রাকৃতিক কারনেই দিন দিন মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। আর বিলুপ্তির পথেও রয়েছে অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। বিশেষ করে নদী-নালা, হাওড়-বাঁওড় ও বিলাঞ্চলের তলদেশ ভরাট হয়ে জলসীমা কমে যাওয়া, প্লাবন ভূমির সাথে সংযোগ খাল ভরাট, বিস্তৃত জলাশয়গুলোতে বছরের সিংহভাগ সময়েই মাছের আবাসযোগ্য পারিমিত পানি না থাকা, প্রজনন মৌসুমে (মে-জুন) বৃষ্টিপাত না হওয়া, জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাষকের ব্যবহার, কল-কারখানার বর্জ্য পদার্থ জলাশয়ে ফেলা, অপরিকল্পিত মৎস আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম ডিমওয়ালা মা মাছ ও ছোট পোনা নির্বিচারে নিধনকরা, অবৈধ কারেন্ট জালের অতিমাত্রায় ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংশ করাসহ জেলেদের মৎসচাষে ব্যাপকভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব।
এসব কারনে বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশীয় প্রায় ৪০ প্রজাতির ছোট মাছ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে,‘দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ পুষ্টিগুণে সেরা। এজন্য এসব মাছ বিলুপ্তির কারনে পুষ্টির উৎসও কমে যাবে। বড় মাছে শুধু প্রোটিন থাকলেও দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছে প্রোটিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন ও ভিটামিন ‘এ’ থাকে যা চোঁখ ভালো রাখে ও দেহ গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, ফুসফুসের প্রদাহ কমায় এবং দাঁত ও হাড়ের গঠন ভালো রাখে। এসব দিক বিবেচনায় শাহজাদপুরসহ চলনবিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক উপকারী দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।’

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com