সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ইসলামী ব্যাংকের সচেতনতা বিষয়ক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত ‘দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই’ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে চায় কানাডা কুমিল্লায় বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম তদারকির নির্দেশনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাস্থ্যসেবার আওতাধীন খাতে ইউজার ফি আদায়ে নীতিমালার সুপারিশ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজলভ্য উৎস খোঁজার তাগিদ প্রতিমন্ত্রীর বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত সুইজারল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন স্পিকার জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে: আইজিপি টেকসই উন্নয়নে সময়োপযোগী আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে ইশরাক ১৬ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পুলিশ কর্মকর্তা কঙ্গোতে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা বাবাকে খুঁজে পেতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপির মেয়ে ডিবিতে কালশী ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশাচালকরা কমলাপুর আইসিডি’র নিয়ন্ত্রণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নিতে সুপারিশ ভোট কম পড়ার বড় ফ্যাক্টর বিএনপি : ইসি আলমগীর অভিবাসী কর্মীদের টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে সরকার

চলতি মাসেই বাড়ছে গ্যাসের দাম

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০১৯
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ রিপোর্ট: গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির তোরজোর চলছে। সরকারের ব্যয় নির্বাহ, ভর্তুকি কমিয়ে আনাসহ নানাদিক বিচেনায় রেখেই গ্যাসের দাম বাড়ানো পক্ষে সরকার। চলতি মাসেই এই মূল্য বৃদ্ধিও আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, একে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বলা যাবে না। এটা আসলে বলে সমন্বয় করা হবে। অবশ্য এমাসেই দাম বাড়ছে কীনা- তা নিয়ে তিনি কোন মন্ত্রব্য করেননি। তবে গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হবে- এটা তিনি দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী যে ভাষাতেই বলুক না কেন- ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ এই গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে।

ইতোমধ্যেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে একটি প্রস্তাবনাও জমা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কতটুকু বাড়বে-তা নির্ভর করছে বিইআরসি’র সিদ্ধান্তের ওপর।

গ্যাসের দাম কোন খাতে কতটা বাড়তে পারে- জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম কতটা বাড়বে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম বাড়বে। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির জন্যই দাম বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলেও বিদ্যুতের মূল্যের ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, যেহেতু আমরা কিছু ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পেট্রোলিয়াম ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি এবং আরও অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের ব্যবহার বাড়াচ্ছি, এতে বিদ্যুতের দামের ওপর সর্বনিম্ন প্রভাবটাই পড়বে।

নসরুল হামিদ বিপু ব্যবসায়ীদের সমলোচনা করে বলেন, যেই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে একটি ক্যাপটিভ জেনারেট ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, সেই একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার প্লান্টে টার্বাইনে ব্যবহার করলে ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ দেবে। এ কারণে ক্যাপটিভকে নিরুৎসাহিত করতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

তবে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনা আসছে সব মহল থেকেই। গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলার), তার সাথে একমত নয় এখাতের বিশেষষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, প্রতিবারই গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে গনশুনানি হয়। আমরা যাই, বক্তব্য দেই। অন্যরা আসে গ্যাসের দাম না বাড়াতে প্রতিবাদ করে। কিন্তু লাভ হয় না। আগামী দিনেও হয়তো আসব। পুরো প্রক্রিয়াটি একটি নাটক বলা যায়। কারণ কারও কথায় কিছু যায় আসে না। সরকারের চাহিদা মত দাম ঠিকই বেড়ে যায়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম গণশুনানি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, এভাবে বারবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করাটা অসাংবিধানিক। সমন্বয়ের নমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করাটা ঠিক হবেনা।

পেট্রোবাংলা থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করলে বছরে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়তে হবে। ফলে গ্যাসের দাম সমন্বয় করা দরকার।

এ ব্যপারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, দেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের জন্য এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। সঙ্গত কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ঘাটতি মেটাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দরকার ছিল বলে তিনি জানান।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ব্যপারে পেট্রোবাংলার আবেদনে বলা হয়েছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার সঞ্চিত না থাকায় বেসরকারি ব্যাংককে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে অর্থায়ন করলে আরও ৫ ভাগ খরচ বাড়বে।

বর্তমানে পেট্রোবাংলা বিজিএফসিএলের কাছ থেকে ৭৭২ এমএমসিএফডি গ্যাস ৭০ পয়সা হারে (ঘনমিটার); বাপেক্সের কাছ থেকে ৩ টাকা ৪ পয়সা হারে; এমএমসিএফডি, এসজিএফসিএলের কাছ থেকে ২০ পয়সা হারে; এমএমসিএফডি, আইওসির কাছ থেকে ২.৫৫ টাকা হারে ১৭১২ এমএমসিএফডি গ্যাস ক্রয় করছে। যার ইউনিট প্রতি দাম পড়ছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ টাকা। আর আমদানি করা এলএনজির দাম পড়বে ৩৯.৮২ টাকা। আর বর্তমানে গড়ে প্রতিঘনমিটার গ্যাস ৭.১৭ টাকা দরে বিক্রি করছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ১০২ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে শিল্পখাতে ১৩২ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯৬ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২০৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধির হার কার্যকর হলে শিল্পখাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে সার, বস্ত্র, ডেনিম, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, স্টিল খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হবে। শিল্পের স্বার্থে স্বল্পমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এলএনজি’র মূল্য নির্ধারণের ওপর গবেষণা পরিচালনা, আমদানিকৃত এলএনজি’র ওপর নির্ভরতা কমানো, সিস্টেম লস কমানো এবং ৩-৫ বছর মেয়াদী জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেন তিনি।

এদিকে সরকারি একটি হিসাব বলছে, বিদ্যমান দামের সঙ্গে ৪৬ শতাংশ দাম বাড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তবে গ্যাসের দাম ৪৬ শতাংশই বাড়ানো হবে, এমনটি নয়। ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে এ খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি করা যেতে পারে। আর গ্যাসের ভর্তুকি কমাতে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবেই। সরকার গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচালন ব্যয়, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে দফায় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। সরকারের কাছে প্রস্তাব রয়েছে, গৃহস্থালি পর্যায়ে দুই বার্নার চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করার। আর এক বার্নারের দাম ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। শিল্প ও সার-কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সরকার এই খাতে ভর্তুকি সমন্বয় করতে যাচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র বলছে, গ্যাসে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয় সরকার। সেই ভর্তুকিটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দাম বাড়িয়ে সরকারের হয়তো মুনাফা হবে না। গ্যাসের অবস্থা পূরণ করার জন্য উচ্চ ব্যয়ে এলএনজি নিয়ে আসছে সরকার। ইতোমধ্যেই বেসরকারি খাতের সামিটও এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। সরকার এই এলএনজি উচ্চমূল্যে কিনে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। এলএনজি আনার জন্য বাড়তি একটি খরচ যাচ্ছে।

জানা গেছে, সরকার গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাসের দাম যা বাড়াবে তার থেকে বেশি বাড়াতে চায় শিল্প ও বাণিজ্য পর্যায়ে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই মনে করেন, গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লে মেনে নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা চান। একই সঙ্গে গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ নিশ্চিত করারও দাবি জানান তারা।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com