বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ও সহিংসতার পর ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়’ চতুর্থ ধাপের ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শুরু হয়েছে।
বরাবরের মতোই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার সাত শতাধিক নির্বাচনী এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা টহলে রয়েছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ভোটের অপেক্ষায় প্রস্তুত।
তিনি বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আশা করছি, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে ফিরবেন। এখন ইসির সার্বিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অংশীজনের সহায়তাও থাকতে হবে।
এবারের ছয় ধাপের নির্বাচনে তিন ধাপের ভোট শেষ হয়েছে গত ২৩ এপ্রিল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণ গেছে অন্তত ৭০ জনের।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, কমিশন এখন নড়েচড়ে বসছে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে সহিংসতা নিয়ে। ভোট কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংসতা কাম্য নয়। সহিংসতা যাতে না হয়- তা ইসি ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে।
এবার প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক ইউপি নির্বাচন হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর দায় নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সহিংসতা রোধে দলগুলোকেও সহিষ্ণু মনোভাব দেখাতে হবে। প্রথম ধাপে সহিংসতা কম হলেও দ্বিতীয় ধাপে তা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপে অনেকটা কমেছে। চতুর্থ ধাপে এ বিষয়ে জিরো টরালেন্স দেখাতে হবে। এটা কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হবে সবাইকে, বলেন জানিপপ চেয়ারম্যান।
চতুর্থ ধাপের ভোট তথ্য
১. ভোট ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার ৭০৩ ইউপিতে।
২. ভোটার ১ কোটি ১০ লাখের বেশি।
৩. ছয় হাজার ৭২৭টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা হবে ভোট চলবে।
৪. চেয়ারম্যান পদে ৩,২৪৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৪,১৮৭ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭,১৫৯ জন প্রার্থী।
৫. চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৩৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২২৭ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯৮ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
৬. এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকবেন ভোটের দায়িত্বে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু হচ্ছে’ দাবি করলেও ভোটকে ‘বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ এনেছে বিএনপির বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে বিএনপি বলে আসছে- এ নির্বাচন ‘অর্থহীন’।
ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ দফার ভোট সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর ‘হামলা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, আগের মতোই ক্ষমতাসীনরা সহিংসতা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার নেই।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘কাঁধে ভর করে’ বিএনপি গোলযোগ সৃষ্টির ‘পাঁয়তারা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলছেন, সহিংসতা ও অনিয়ম ‘শূন্যের কোঠায়’ আনতে ‘আরো কঠোর’ হবেন তারা।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অসহিষ্ণুতার কারণে সহিংসতা ঘটছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আগের তুলনায় এবার ইতিবাচক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। আশা করি, আগামী নির্বাচনগুলো কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস