করোনার বিশেষ ছাড়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে। আর খেলাপি ঋণ কমার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণেও। সার্বিক খাতে ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। একই সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যাও কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে ১১ ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, যার অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে একটি ব্যাংকেই।
আগের প্রান্তিক গত সেপ্টেম্বরে ১২টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল এবং তাদের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি কমে হয়েছে মাত্র ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে .২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে।
মহামারি করোনার কারণে জানুয়ারি থেকে সব ধরনের নিয়মিত ঋণ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন করে খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। এতে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হয়নি। উল্টো কিছু কিছু ঋণ আদায় হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ নীতিমালার আওতায় বড় অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। এতে গত বছর খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় পাঁচ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সব মিলে গত বছর শেষে খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭.৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের দরকার ছিল ৬৪ হাজার ৮০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে মাত্র ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর গত জুনে এই খাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল চার হাজার ৪৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, এ সময়ে ১১টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত, দুটি বিশেষায়িত ও ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর বেসরকারি ছয় ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ এক হাজার ৫৫১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৬৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বাংলা৭১নিউজ/এআরকে