বাংলা৭১নিউজ, আফতাব হোসেন, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যাত্রাপালা এখন একেবারেই বিলুপ্তির পথে। লোকসংস্কৃতির এক অতুলনীয় ভান্ডার আমাদের এই দেশ। সেই লোকসংস্কৃতির পরিধির এক সুবিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যমূলক এই যাত্রাপালা। নিত্যনতুন কাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র নয়, তবে চলচ্চিত্রের চেয়ে বিস্ময়কর এই যাত্রাপালা। প্রাচীন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ত্ব বা রাজা বাদশাহদের ঐতিহাসিক জীবন কাহিনী ও অমর প্রেমকাহীনি নিয়ে রচিত হতো এই যাত্রা পালা। যা অধিকন্ত আমাদের দেশের গ্রাম সমাজে মঞ্চস্থভাবে প্রদর্শিত হতো।
আসন্ন নববর্ষ উৎসব “১লা বৈশাখ”। ১লা বৈশাখের মত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও মঞ্চস্থ হতো এই যাত্রাপালা। হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন পূজোতেও যাত্রাপালা অভিনীত হতো। অতীতে শারদীয় দুর্গাপুজা থেকে শুরু হতো যাত্রা পালার মৌসুম। মৌসুম শুরু হবার এক থেকে দেড় মাস আগে থেকেই চলতো রিহার্সেল ও যাত্রাদলের বুকিং। যা পূর্বে বায়না হিসেব অভিহিত ছিল। এছাড়া তৎকালীন সময় জমিদার বাড়িতে বিভিন্ন উৎসবেও যাত্রার আসর বসানো হতো। নৌকায় ভাসমান অবস্থায়ও অভিনীত হতো এই যাত্রাপালা।
লোকসংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম যাত্রা পালার উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ সৃষ্টি হলেও ষোড়শ শতাব্দীকে যাত্রা পালার জন্মকাল ধরা হয়। ১৫০৯ সালে প্রথম যাত্রা অভিনীত হয় এবং সেই যাত্রার নাম ছিল- “রুক্ষ্মিণী হরণ”। তবে প্রকৃত অর্থে যাত্রা অভিনয়ের পরিচিতি হয় প্রায় আড়াইশ বছর পর।
যাত্রাপালার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনলাইন গণমাধ্যম উইকিপিডিয়ায় বর্ণিত আছে- যাত্রা প্রধানত চারঘন্টাব্যাপি বিপুল আয়োজনের বিনোদন। উচ্চ শব্দ ও চড়া আলোর ব্যবহারে এবং দৈত্যাকার মঞ্চে বিশেষ নাটকীয় ভাবভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। যাত্রা একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা।
একটা সময়ছিল যখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা ভাবলেই গ্রাম বাংলার মানুষের চোখের সামনে যাত্রাপালা ভেসে উঠতো। তখন হয়তো এতো উন্নত প্রযুক্তির দ্বারা বেশি রিজুলেশন নিয়ে এতো ঝকঝকে চলচ্চিত্র নির্মিত হতো না। মানুষের হাসি-খুশি ও ঐতিহাসিক জীবনকাহিনী প্রদর্শনের একমাত্র চিত্র-মাধ্যম ছিল এই যাত্রা পালা। যা আজ একেবারেই বিলীন। গত শতকের ষাট দশকেও যাত্রা শিল্পের বেশ রমরমা অবস্থা ছিল। যা আজ একেবারেই বিলীন।
তথাকথিত সমাজে যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন যাত্রা-দল গঠিত হতো। দলের শিল্পীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন রকমের যাত্রা প্রদর্শন করতো। তাদের কাহিনী প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ খুজে পেতো তাদের সুখ,দুঃখ,হাসি,কান্না ও বাস্তব জীবনের জ্ঞানের সমারোহ। তৎকালীন প্রদর্শিত যাত্রাগুলো হল- মহিষাসুর বধ, রাবণ বধ, রামের বনবাস, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, কমলার বনবাস, শহীদ কারবালা, সাইফুল-মুল্লুক, বদিয়াজ্জামাল, আলোমতী-প্রেম কুমার, কাশেম-মালার প্রেম, জোসনা তারা, ভিখারীর ছেলে, রাখাল বন্ধু, রহিম-রুব্বান, গুনাঈ বিবি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইত্যাদি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস