গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দেশের শেয়ারবাজারে হু হু করে বাড়ছে আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবি’র শেয়ারের দাম। অন্যদিকে ক্রেতা সংকটে পড়ে প্রতিদিন দর হারাচ্ছে গ্রামীণফোন। ফলে বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের শেয়ারহোল্ডারদের কপাল পুড়লেও পোয়াবারো অবস্থা রবির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের।
বিটিআরসি থেকে গ্রামীণফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে দুই হাজার ৩৬৩ কোটি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এ তিন কার্যদিবসে রবি’র প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে চার হাজার ৮৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সংযোগে গ্রাহকদের ‘মানসম্মত সেবা দিতে না পারার’ কারণ দেখিয়ে গত বুধবার (২৯ জুন) গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বিটিআরসি। এরপর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। অন্যদিকে শূন্য হয়ে যায় ক্রয় আদেশের ঘর।
অন্যদিকে প্রায় ছয়মাস ধরে পতনের ধারায় থাকা রবি’র শেয়ার এদিন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। গ্রামীণফোনের শেয়ার ক্রেতা সংকট দেখা দিলেও রবি’র শেয়ারের ক্রেতা বেড়ে যায়। ফলে বাড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।
এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে রবি’র শেয়ার দাম বাড়ানোর জন্য গ্রামীণফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমন গুঞ্জন ছড়ানোর পর রবি’র শেয়ারের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে বেড়ে যায় রবি’র শেয়ারের ক্রয় আদেশ।
বাজারে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন সত্যি হয়ে ওঠে চলতি সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই। রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের সর্বোচ্চ দামে রবি’র শেয়ার কেনার বিপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ আসে। এতে শুরুতেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায় রবি, যা অব্যাহত থাকে দিনের লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।
অন্যদিকে লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে গ্রামীণফোনের বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। ফলে দিনের সর্বনিম্ন দামে শুরু হয় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।
একই চিত্র দেখা গেছে সোমবারের লেনদেনেও। সোমবার লেনদেন শুরু হতেই গ্রামীণফোনের শেয়ার দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায় এবং দিনভর ওই দামেই লেনদেন হয়। অন্যদিকে লেনদেনের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে রবি’র শেয়ার দাম। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে দিনের লেনদেন দুই ঘণ্টা বাকি থাকতেই দিনের সর্বোচ্চ দামে চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার। লেনদেনের শেষপর্যায়ে এসে দিনের সর্বোচ্চ দামে কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ আসলেও বিক্রির ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোন বাজার মূলধনের হিসাবে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। সূচকেও সব থেকে বড় প্রভাব রাখে এ কোম্পানিটি। এরআগে ২০১৯ সালে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বিটিআরসি’র সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায় গ্রামীণফোন। সেসময়ও কোম্পানিটির শেয়ারের বড় দরপতন হয়। তবে শেষ তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার যেভাবে ক্রেতা সংকটে পড়ছে, এরআগে এমন অবস্থায় আর পড়েনি।
এদিকে, নামমাত্র মুনাফ করা রবি ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর পর টানা বেড়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ৭০ টাকা ১০ পয়সা পর্যন্ত ওঠে। এরপর থেকেই পতনের মধ্যে পড়ে কোম্পানিটির শেয়ার। ধারাবাহিকভাবে দাম কমতে কমতে ২৮ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে যায়। আর গ্রামীণফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসার পর গত তিন কার্যদিবসে সেখান থেকে বেড়ে এখন ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ