বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: তানভীর কাদেরীর বসুন্ধরার বাসায় ছিলেন গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। হামলার মাস খানেক আগেই ওই বাসায় আসেন গুলশান হামলার প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী। ওই বাসার আলাদা একটি কক্ষে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে থাকতেন তামিম।
এই জঙ্গিদের খাবার রান্না করে দিতেন তানভীরের স্ত্রী আবেদা তুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা। হামলার দিন রাতেই বসুন্ধরার ওই বাসা ছাড়েন তামিম। আর সকালে বাসা ছেড়ে যায় তানভীর কাদেরীর পরিবার। মে মাসে ওই বাসাটি ভাড়া নেওয়া হয়।
আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তানভীরের ছেলেকে (কিশোর, বয়স ১৪) জিজ্ঞাসা করে এসব তথ্য জানা গেছে বলে তদন্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ছেলেটি এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। ১৮ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় করা মামলায় শিশুটিকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার একটি আদালত।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আহসানুল হক বলেন, ‘নিহত জঙ্গি তানভীরের কিশোর ছেলেটিকে হেফাজতে নিয়েছি গতকাল সোমবার। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে শিশুটিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, আজিমপুরের বাসায় যাতায়াতকারী কয়েকজন অজ্ঞাত পুরুষ ও নারী জঙ্গি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও জঙ্গির নাম-ঠিকানা জানার জন্য কিশোরকে নিয়ে অভিযান চালানো প্রয়োজন।
১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাসা থেকে তানভীর কাদেরীর (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে তানভীরের ছেলেসহ তিন নারী জঙ্গি গ্রেপ্তার হন।
এঁরা হলেন তানভীরের স্ত্রী আবেদা তুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা (৩৫), জঙ্গি নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি (২৫) এবং আরেক জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শায়লা আফরিন (২৫)। তাঁরা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারজান ও বাশারুজ্জামানকে খুঁজছে পুলিশ।
তানভীরের বাসায় নিয়মিত আসতেন গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি বাশারুজ্জামান। কিশোর ছেলেটি তাঁকে চকলেট ‘আংকেল’ নামে ডাকত। বসুন্ধরা, পল্লবী ও আজিমপুরের বাসায় এসে বাশারুজ্জামান নিয়মিত তানভীরের সঙ্গে দেখা করতেন।
কিশোর ছেলেটি আরেক জঙ্গির নাম বলেছে। তার নাম মুসা। সে মুসা আংকেল নামে তাকে ডাকত। বসুন্ধরা ও পল্লবীর বাসায় এসে সে-ও তানভীরের সঙ্গে দেখা করত। তবে আজিমপুরের বাসায় কখনো সে আসেনি। গুলশান হামলার প্রধান সমন্বয়ক তামিম বসুন্ধরার বাসায় আসার পর আরেক জঙ্গি (নিহত) মেজর জাহিদও ওই বাসায় আসতেন। পল্লবীর বাসায়ও এসেছিলেন জাহিদ।
তদন্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, গুলশান হামলার চার মাস আগে নিহত জঙ্গি তানভীর সপরিবারে উত্তরায় থাকতেন। গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর ওই ছেলে উত্তরার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করত। ছেলেটি লেখাপড়ায় খুব ভালো। তার স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে সে প্রকৌশলী হবে।
গুলশান হামলার আগে থেকে ওই কিশোরটিও জানত, বসুন্ধরার ওই বাসায় বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জঙ্গিরা। তামিমকে সে তামিম আংকেল বলে ডাকত। নিজেও অনেক দিন তাঁদের খাবার দিয়ে এসেছে। হামলার খবর সে অনলাইনে দেখে।
হামলায় অংশ নেওয়া ওই পাঁচজনকে চিনতেন বাসার দারোয়ান। হামলার পর তাঁদের ছবি প্রকাশ হলে ঘটনা জানাজানি হবে—এ কারণে তামিম সকালেই বাসা ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে রাতেই চলে যান। তারা সে কারণে সকালে বাসা ছেড়ে যায়।
আজিমপুরের বাসা থেকে চারটি পিস্তল, চারটি ল্যাপটপ উদ্ধার করে পুলিশ। আর চার লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মেজর জাহিদের একটি ডায়েরি এবং জেবুননাহার ইসলাম নামের আরেক নারীর পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র।
গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় পুলিশের ৩১ সদস্যসহ ৪১ জন আহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকর্মী। অভিযানের আগে ও পরে ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়। হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাও নিহত হন।
গুলশানের হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। হামলার প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জ এবং মেজর জাহিদ পল্লবীতে পুলিশের অভিযানে নিহত হন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম