বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে, সেগুলো সরকারের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গি তৎপরতায় জড়িতদের তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। এ সময় তিনি জানান, গুলশান হামলার আগাম তথ্য জানতো গোয়েন্দারা।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মতবিনিময় সভা। দেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ৫ জন করে শিক্ষক- শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল ও কলেজের প্রধানরা যোগ দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ সভায়। এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি নিজেরা কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছেন, তা তুলে ধরা হয়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, অনেকগুলো পদক্ষেপ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছে। লাইব্রেরি নতুন করে সাজানো হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাবের সার্ভার খুব শক্ত করা হয়েছে। মনে হয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা নেই। মসজিদেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় একটা ইমেজ প্রবলেমে ভুগছে।… পত্রপত্রিকায় আমাদের প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষকদের নাম আসছে। আমি অস্বীকার করতে রাজি নাই। আমরা সমস্যা সমাধানে সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
‘এই যে মারাত্মক জীবাণু, সেটা যেখান থেকেই এসে থাকুক- মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে থাকুক, ইউরোপ থেকে এসে থাকুক, কম্পিউটারের মাধ্যমে এসে থাকুক, প্রচারপত্রের মাধ্যমে এসে থাকুক, এদেশে এসেছে এবং কিছু কিছু মানুষকে কলুষিত করেছে, বিষাক্ত করেছে, এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।’
এসব বিষয় প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেক মুহূর্তের খোঁজ-খবর রাখা হবে বলেও জানান নর্থ সাউথের উপাচার্য।
একটা মতাদর্শ অনুরসণ করে শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আতিকুল বলেন, ‘কাউন্টার আইডিওলজি দিতে হবে।… সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস সবার মধ্যে আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক, কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুক তাকে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়তে হবে। আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে, ওই ধরনের পরিবেশ তৈরি হয় এ ধরনের পরিবেশ যেন নর্থ সাউথে না থাকে।’
শিক্ষার্থীদের ‘নষ্ট’ হওয়া রোধে সরকারি সংস্থার সমর্থন নিয়ে কাজ করবেন জানিয়ে অভিভাবকদেরও সন্তানদের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এই শিক্ষক।
‘ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরে নিজের রুমটা বন্ধ করে ওয়েবসাইটে কী কী করে তা খেয়াল রাখতে হবে। দরজা বন্ধ করতে দেবেন না, দরজা খোলা থাক।’
আর স্কলাস্টিকার অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাউসার আহমেদ বলেন, কোথাও একটা ফাঁক-ফোকর রয়েছে। যেই ফাঁক-ফোকরের মাধ্যমে এই সন্ত্রাস ঢুকে পড়ছে।
সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে কোনো জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই ধরনের শিক্ষকদের আপনারা কিভাবে নিয়োগ দেন? একজন শিক্ষক কিভাবে তাদেরকে বাড়িতে আশ্রয় দেয়।’ পুলিশের মহাপরিচালক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘ব্যাপকভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সকলের সহযোগিতায় আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে চাই।’
কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর বিপথগামী কিছু তরুণের জন্য দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে মন্তব্য করে সরকারের মন্ত্রীরা সবাইকে সতর্ক করে দেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘অনেক শিক্ষক বলেন, এত ছাত্র চিনবো কি করে? এত ছাত্র যদি চিনতেই না পারেন, তাহলে ভর্তি করেন কেন? যতটুকু চিনতে পারবেন ততটুকু ভর্তি করবেন তার বেশি ভর্তি করবেন না। যারা শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবেন না। তাদের প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যেতে পারবেন না। আইনের মাধ্যমে আমরা বাতিল করতে বাধ্য হবো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছিল যে, গুলশান এলাকায় একটা কিছু হতে যাচ্ছে বা হতে পারে। আমরা নানাভাবে তৈরি ছিলাম। ৫০টি টার্গেট কিলিং হয়েছে এগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। কারা এর পেছনে ছিল, কে কে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, কাদের দ্বারা এগুলো সংঘটিত হয়েছে সব তথ্য আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী সংগ্রহ করেছে।’
সভায় জানানো হয়, আগামী ২১ জুলাই কলেজ প্রধানদের, ২৩ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে মাদ্রাসার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক আয়োজন করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইস